আত্ম শুদ্ধি বা অন্তরের পবিত্রতা

মানুষ বাহ্যিক বিষয়ে উন্নয়ন, সুন্দর ও সজ্জিতকরণে অধিক যত্নবান ও মনোযোগী। কিন্তু আভ্যন্তরীণ বিষয়ে সজ্জিতকরণে ও তার শুদ্ধি এবং সংশোধনে সম্পূর্ণ ভাবে গাফিল বা অন্যমনষ্ক।

বাহ্যিক বিষয়কে সুন্দর করার জন্যে সে কত যে সময়, ক্লান্তি ও চেষ্টা এবং শক্তি ব্যয় করছে অথচ অন্তরের সংশোধন ও আভ্যন্তরীণ বিষয়ের সংশোধনে সম্পূর্ণ ভাবে গাফিল। এমনকি অনেক মানুষ বাহ্যিক সৌন্দর্য এবং তার শোভা প্রকাশ করা ছাড়া তার মধ্যে অন্য কোন আগ্রহই দেখা যায় না।

অথচ আভ্যন্তরীণ সৌন্দর্য এবং অন্তরের যথার্থতা ও সঠিকতাই হলো মূল বিষয় এবং যার উপর নির্ভর করবে দুনিয়া ও আখেরাতের মুক্তি।

অত্ম শুদ্ধি বা অন্তরের পবিত্রতার বিষয়টি হলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও তার প্রভাবও হলো বিরাট গৌরবময়। কারণ আল্লাহ তা'আলা অন্তরের এসলাহ বা সংশোধনের জন্য কিতাব (কুরআন)  অবতীর্ণ করেছেন এবং অন্তরের সংশোধন, সজ্জিতকরণ এবং সুবাসিত ও সুগন্ধময় করার জন্য রাসূলগণকে পাঠিয়েছেন।

অন্তর হলো পরিচয়ের স্হান,  তাই এই অন্তর দিয়েই বান্দাহ তার প্রতিপালক ও মনিবের পরিচয় লাভ করে থাকে। আল্লাহ তা'আলা যা তাঁর বান্দার প্রতি অহী আকারে নাযিল করেছেন তা গভীরভাবে চিন্তাভাবনা করে থাকে। আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ "তবে কি তারা কুরআন সম্বন্ধে অভিনিবেশ সহকারে চিন্তা করে না? না তাদের অন্তর তালাবদ্ধ? " (সূরা মুহাম্মাদ -৪৭ঃ২৪)।

ঈমান ও কুফরী এবং হিদায়েত ও গোমরাহী, ভ্রষ্টতা ও সততার মূল হলো যা বান্দার অন্তরে সম্পন্ন হয়ে থাকে। তাই আত্ম শুদ্ধি বা অন্তরের সংশোধন, পবিত্রতা একান্ত প্রয়োজন। কারণ, মানুষের অন্তরই হলো তার দেহের বাদশাহ এবং অনুসৃত রাষ্ট্র প্রধান।

নো'মান ইবনে বাশীর (রাঃ) থেকে হাদীসে বর্ণিত আছে, রাসূল (সাঃ) বলেনঃ "সাবধান! শুনে রেখো, দেহে বা শরীরে একটি মাংসখন্ড আছে, মাংস খন্ডটি যখন সুস্হ ও ভাল থাকে তখন সমস্ত দেহ ও শরীর সুস্হ ও ভাল থাকে এবং তা যখন নষ্ট ও বিকৃত হয়ে যায় তখন সমস্ত দেহ ও শরীর নষ্ট হয়ে যায়। এবং জেনে রেখো যে সেই মাংসখন্ডটি হলো ক্বালব বা অন্তর।" -( বুখারী ও মুসলিম শরীফ)।

ইমাম আহমদ বিন হাম্বল, আনাস (রাঃ) থেকে হাদীস বর্ণনা করেন যে, রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ " বান্দাহর অন্তর সঠিক ও সোজা না হওয়া পর্যন্ত তার ঈমান খাঁটি হবে না।" -( আল মুসনাদ হাদীস নং ১৩০৭৯)।

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কিয়ামতের দিনের নাজাতকে অন্তরের সঠিকতা, সততা এবং পরিচ্ছন্নতার সাথে সম্পৃক্ত করেছেন। আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ " যে দিন ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি কোন কাজে আসবে না। সে দিন উপকৃত হবে শুধু সে, যে আল্লাহ তা'আলার নিকট আসবে বিশুদ্ধ অন্তঃকরণ নিয়ে।" -( সূরা শুআ'রা- ২৬ঃ৮৮-৮৯)।

অন্তর হলো দ্রুত পরিবর্তনশীল এবং অত্যন্ত স্বাধীন ইচ্ছার অধিকারী। এ কারণেই নবী করীম (সাঃ) অধিকাংশ সময়ে দু'আ করতেনঃ " হে অন্তরের পরিবর্তনকারী! আমার অন্তরকে তোমার দ্বীনের প্রতি স্হির রাখ।" -(মুসনাদে ইমাম আহমদ)।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Post a Comment (0)

নবীনতর পূর্বতন