সৎ সাথী

মহান স্রষ্টা মানব জাতিকে সৃজন করে এ ধরণীতে স্বল্প সময়ের জন্য প্রেরণ করেছেন। মানব সামাজিক জীব। মানুষকে জীবনের প্রথম পদচারণাই সামাজিকতার মাধ্যমে শুরু করতে হয়। বাল্যকালের খেলাধুলার সাথী থেকে চলতে থাকে চিরদিনের সাথীত্ব। পরিপূর্ণ ধর্ম ইসলামে মানবাত্মার চাহিদানুযায়ী সুশৃঙ্খল ও সভ্যতাপূর্ণ সমাজ গঠনের জন্য স্বভাবসুলভ ব্যবস্হা দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, " ইসলাম ধর্মে বৈরাগ্য নেই।"


একাকী জীবন  যাপন অতীব দুরূহ ব্যাপার বিধায় রাব্বুল আলামীন বিবাহের এক আনন্দঘন ব্যবস্হা দিলেন মানব জাতিকে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তা'আলা বলেছেন, " তিনিই তোমাদের থেকে তোমাদের স্ত্রী জাতিকে সৃষ্টি করেছেন। যাতে তোমরা তার কাছে যেয়ে মনের শান্তি লাভ করতে পার।" -সূরা রুম-৩০ঃ২১।


জীবনপথে সৎ সাথীর প্রয়োজনীয়তাঃ
বাস্তবপক্ষে গভীরভাবে চিন্তা করলে দেখতে পাওয়া যায়, ব্যাপারটি নিয়মতান্ত্রিকতার গতিতে অতিসহজ। অগ্নি যেমন তার নিকটবর্তী স্হানকে উত্তপ্ত করে, পানি তার স্বভাবানুযায়ী পার্শ্ববর্তী বস্তুতে ঠান্ডা দেয়। তেমনিভাবে সঙ্গীর প্রতিক্রিয়াও অতিশীঘ্রই বন্ধুর উপর প্রতিভাত হয়। সাহচর্যকে আমরা সংক্রামক ব্যাধির স্হানে অধিষ্ঠিত করতে পারি। যেহেতু বলা হয়েছে, "মানুষ গড়ে উঠে পরিবেশের ছাঁচে।" প্রবাদটি সর্বজনবিদিত।


যুক্তিবিদ্যার সংস্কারক আল্লামা ইবনে সিনা বলেন, ছেলেমেয়েকে শিক্ষা দেওয়া যেমন মাতা-পিতার একটি অপরিহার্য্য করতব্য, তেমনিভাবে প্রাথমিক শিক্ষার জন্য ভালো ও সৎ ছেলের সাথে দেয়া অতীব প্রয়োজন।


আধুনিকতার যুগে অভিভাবকদের এদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই বলে আজ অনেক ছেলেমেয়ে মাতা-পিতার অগোচরে অনৈসলামী কার্যকলাপে মত্ত। অসৎ চরিত্রের অধিকারী, বদ মেজাজ সাথীর উম্মাদনা দেখে তারা নৈতিকতা বিরোধী কার্যকলাপে আরও বেশী সাহসী হয়ে উঠেছে। বাংলা প্রবাদে আছে, " সৎ সঙ্গে স্বর্গবাসঃ অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ।"


প্রখ্যাত চিন্তাবিদ, প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস মালিক বিন দিনার (র) তাঁর জীবনের অবসর সময় ব্যয় করতেন কুকুরের সঙ্গে। এসম্পর্কে তাঁকে প্রশ্ন করা হলে প্রতিউত্তরে তিনি বলেছিলেন, অসৎ সাথীর চেয়ে বরং কুকুরের সংস্রবই উত্তম। যেহেতু অসৎ সাথীর সংক্রামক প্রভাব, দোষাচার অতি সহজে বিস্তৃতি লাভ করে। -( ফয়জুল ক্বাদীর, ৬ষ্ঠ খন্ড, পৃঃ৩৭২)


সৎ-সাথীর উপকার শুধু ইহধামেই সীমিত নয়; বরং পারলৌকিক জগতেও অনুভূত হবে। অসৎ সাথী-সঙ্গীর কুসংস্কারের বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে অনেক মানুষ দোজখে নিপতিত হবে। তাদের তখনকার আক্ষেপপূর্ণ বাক্যালাপ ভবিষ্যত সর্বজান্তা আল্লাহ তা'আলা স্বীয় গ্রন্থ কোরআনুল কারীমে বর্ণনা করেছেন। তখন তারা বলবে, "যদি অমুককে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করতাম।"


সৎ সাথীর সঙ্গগুনে মানুষ যেমন পার্থিব জগতেও   সুখ ভোগ করতে পারে, তদ্রূপ পরকালীন জনমেও পাবে আকর্ষণীয় সুফল। সৎ সাথী  গ্রহণের উপকারসমূহঃ
১. আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায়, ২. ফেরেশতাগণ আনন্দিত হয়, ৩. সামাজিক উন্নতি সহজসাধ্য হয়, ৪. শ্রদ্ধার আসনে সমাসীন হওয়া যায়, ৫. জীবন সুখের হয়, ৬. কাজে উৎসাহ মিলে, ৭. পূর্ণ্য অর্জিত হয়, ৮. সাস্হের উন্নতি ঘটে, ৯. স্ত্রীর শ্রদ্ধা ও ভালবাসা পাওয়া যায়, ১০. পরকালে বেহেশতের আশা করা যায়।


সৎ সাথী কারা বা সৎ মানুষ কে?
এ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের সমাধান মহাগ্রন্থ আল-কোরআন তার ছোট্ট একটি আয়াতেই পরিষ্কার ভাষায় বলে দিয়েছে।  বলা হয়েছে,  হে মুমিনগণ, তোমরা মুত্তাকী অর্থাৎ সংযমী হও। পুণ্যবান হবার পদ্ধতি বর্ণনায় বলা হয়েছে,  তোমরা ধৈর্যশীলদের সাথীত্ব বরণ কর।


আমাদের কার সঙ্গে ওঠা-বসা করলে ঈমান আমলের জন্য লাভ জনক বা ক্ষতিকর -এ বিষয়টা আমরা চিন্তাতেই আনি না। অথচ জীবনপথে চলা ও কাজের জন্য সৎ সাথীর নিতান্ত প্রয়োজন।


সারকথা পাপ থেকে বিরত হতে চাইলে, ভাল জীবন গড়তে চাইলে, পাপীদের, সাথে ওঠা-বসা বন্ধ করতে হবে, সৎ সাথী গ্রহণ করতে হবে। আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে আমল করার তাওফীক দান করুন। - আমীন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Post a Comment (0)

নবীনতর পূর্বতন