শাফায়াত আরবী শব্দ যার অর্থ- সুপারিশ, অনুরোধ, মধ্যস্হতা এবং পৃষ্ঠপোষকতা ও পক্ষ সমর্থন। শাফায়াত এর কর্তা বিশেষ্য হলো শাফীউন, এবং শাফেউন। এর অর্থ- সুপারিশকারী, মধ্যস্হতাকারী, পক্ষ সমর্থনকারী, পৃষ্ঠপোষক।
শাফায়াতকে কেন্দ্র করে ছড়িয়ে আছে ব্যাপক অন্যায়, অবৈধ, এমনকি শিরকি কর্মকাণ্ড। এর কারন দু'টিঃ ১. অজ্ঞতা, ২. পার্থিব স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে কলা কৌশল অবলম্বন। কোরআন ও হাদিসে শাফায়াতের সঠিক ধারণা পেশ করা হয়েছে।
কুরআন এবং সুন্নাহ অনুযায়ী সকল প্রকার দোয়া প্রার্থনা ফরিয়াদ সরাসরি আল্লাহর কাছে করতে হবে। পাপ মোচনের জন্যে সরাসরি আল্লাহ তা'আলার কাছে ফরিয়াদ করতে হবে। তওবা কবুল করার জন্যে সরাসরি আল্লাহ তা'আলার নিকট অনুতপ্ত হতে হবে, প্রার্থনা করতে হবে। হিদায়াত দান ও সঠিক পথ প্রদর্শনের জন্যে সরাসরি আল্লাহ তা'আলার নিকট প্রার্থনা করতে হবে। ভাগ্য পরিবর্তনের জন্যে সরাসরি আল্লাহ তা'আলার নিকট ফরিয়াদ করতে হবে। পরকালের মুক্তি ও নাজাতের জন্যে সরাসরি আল্লাহ তা'আলার কাছে আবেদন নিবেদন ও রোনাজারি করতে হবে।
সকল বিষয়ে কুরআন সুন্নাহ অনুযায়ী আমল করতে হবে। সকল কাজে রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে অনুসরণ করতে হবে। সাহাবায়ে কিরামের আদর্শকে নিজের আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করতে হবে।
এভাবেই যিনি সত্যিকার মুসলিম হিসেবে জীবন যাপন করার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যান। আখিরাতে আল্লাহ পাক তাকে নাজাত দিবেন। তার পক্ষেই আল্লাহ তা,আলার রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুপারিশ করবেন। ফেরেশতারা তার জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং কিয়ামতের দিন তারা তার জন্যে সুপারিশ করবে। কুরআন সুপারিশ করবে। সকল মুক্তি প্রাপ্ত নেককার লোকেরা তার জন্যে সুপারিশ করবে।
শাফায়াতের প্রথম জায়গা হলো হাশর ময়দানে আল্লাহর আদালতে। আর দ্বিতীয়টি হলো জাহান্নাম থেকে পাপী মু'মিনদের মুক্তির জন্যে। আল্লাহ তা'আলার অনুমতি ও সম্মতি ছাড়া কেউই শাফায়াত করার সাহস পাবে না, এমনকি ফেরেশতা এবং নবীগণও নয়।
আল্লাহদ্রোহী, কাফির ও শিরক করা লোকেরা চিরকাল জাহান্নামেই পড়ে থাকবে। শিরকের পাপ আল্লাহ মাপ করবেন না। শিরক ছাড়া অন্যান্য পাপ যাকে ইচ্ছা তিনি ক্ষমা করবেন। আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ " নিশ্চয় যারা আল্লাহর সাথে শিরক করে, আল্লাহ তাদের ক্ষমা করবেন না।" -(সূরা নিসা-০৪ঃ৪৮)।
ইমাম মুসলিম (রহঃ) শাফায়াত করার এবং আল্লাহর একত্বে বিশ্বাসীদের জাহান্নাম থেকে বের করে আনার প্রমাণ স্বরূপ মোট ৪০ চল্লিশ টি হাদীস তাঁর গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করেছেন।
শিরক করেনি এমন ঈমান থাকা পাপীরা আযাবের পর নাজাত পাবে। এবিষয়ে আল কুরআনের সূরা নিসা-৪ঃ৪৮ ও ১১৬ নং আয়াতে পজিটিভ ইংগিত রয়েছে।
আনাস বিন মালেক (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীস আল্লাহর রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- আল্লাহ তা'আলা বলবেনঃ আমার ইযযত, মর্যাদা, শ্রেষ্ঠত্ব ও মহত্বের কসম! যারা আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই ঘোষণা দিয়েছে, আমি তাদের সবাইকে দোযখ থেকে বের করবো।- (মুসলিম শরীফ, ঈমান অধ্যায়)।
শাফায়াত লাভ করবে শুধুমাত্র আল্লাহর একত্বে বিশ্বাসীরা। যারা পৃথিবীতে নিষ্ঠার সাথে ঘোষণা দিয়েছিল, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই। -(সহীহ বুখারী)। যারা শিরক করে তারা শাফায়াত লাভ করবে না। - সহীহ বুখারী, মুসলিম)।
আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীস হাশর ময়দানে মুহাম্মদ রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শাফায়াত করবেন। আল্লাহ বলবেন- হে মুহাম্মদ (সাঃ) সুপারিশ করো, তোমার সুপারিশ গ্রহণ করা হবে। -(সহীহ বুখারী, কিতাবুল আম্বিয়া)।
পৃথিবীতে যাদেরকে শাফায়াতকারী ধরা হয়েছিল, তারা সব উধাও হয়ে যাবে। সূরা আনআম এর ৯৪ নং আয়াতে কল্পিত শাফায়াতকারীদের কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না বলে বলা হয়েছে-
"আজ তোমাদের মধ্যকার সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে গেছে এবং যারা শাফায়াত করবে বলে ধারণা করেছিলে তারা তোমাদের থেকে উধাও হয়ে গেছে।" -(সূরা আনআম-০৬ঃ৯৪)।
আল্লাহর অনুমতি ও সম্মতি ছাড়া শাফায়াতের জন্যে কেউ 'টু' শব্দও করতে পারবে না। যিনি আল্লাহর অনুমতি ও সম্মতি লাভ করবেন একমাত্র তিনিই শাফায়াত করতে পারবেন, তিনি ছাড়া আর কেউই শাফায়াত করতে পারবে না। শাফায়াতকারী সত্য ও ন্যায়ের বিপরীত কোন কথাই বলবেন না। যার প্রতি আল্লাহ সন্তুষ্ট শুধুমাত্র তার ব্যাপারেই শাফায়াত করা যাবে।
"সেদিন শাফায়াত কার্যকর হবেনা, তবে দয়াময় রহমান নিজেই যদি কাউকেও অনুমতি দেন এবং তার কথা শুনতে রাজি হন সেটা ভিন্ন কথা। -(সূরা ত্বহা-২০ঃ১০৯)।
শিরকে নিমজ্জিত যালিম ও গুরুতর অপরাধী শাফায়াত লাভ করবে না। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনের ৭৮ঃ৩৮, ০২ঃ২৫৫, ১০ঃ০৩, ১৯ঃ৮৭, ২১ঃ২৮ নং আয়াতগুলিতে বলা হয়েছে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন