ইসলামী জীবন বিধানের যাবতীয় সমস্যার সুষ্ঠু সমাধানকল্পে পবিত্র কুরআনে হাকীমের পরবর্তী স্থান আল-হাদীসের। আর মহানবী (সাঃ) -এর মুখ নিঃসৃত এ বাণী যুগে যুগে হয়েছে সংরক্ষিত। যা মহানবী (সাঃ) এর খুলাফায়ে রাশেদীনের যামানায় সংকলন প্রয়োজন পড়েনি। সাহাবায়ে কেরাম যারা ঈমান এনে রাসূল (সাঃ) -এর দীর্ঘদিন সোহবত গ্রহণ করেছেন এবং হাদীস শ্রবণ করেছেন তাদের হাদীস সংকলন প্রয়োজন পড়েনি। কারণ সাহাবাগণের স্মৃতিশক্তি ছিল সুতীব্র। তাঁরা শ্রবণ করেই তা অনেক দিন যাবত সরাসরি মুখস্ত রাখতে পারতেন।
মহানবী (সাঃ) -এর কাছেই কুরআন শরীফ নাযিল হত। আর পবিত্র কুরআন তখন লিপিবদ্ধ করা হচ্ছিল। তাই হাদীস লিখে রাখলে কুরআনের সাথে মিলে যেতে পারে এ ভয়ে হাদীস সংকলন তখন বন্ধ ছিল। মহানবী (সাঃ) নিজেই ইরশাদ ফরমান -
অর্থাৎ তোমরা আমার থেকে হাদীস লিখে রেখো না, আর যদি কেউ কুরআন ব্যতীত অন্য কিছু লিখে রাখ তাহলে তার উচিত তা (হাদীস) মুছে ফেলা।
মহানবী (সাঃ) -এর সময়-কালে লেখার প্রয়োজনীয় উপকরণ ছিল অনেকাংশেই কম। এ ছাড়াও লেখার পদ্ধতি ছিল অনুন্নত ও মুখস্হকরণ পদ্ধতি সহজ হওয়ায় সাহাবাগণ সংকলন করার পরিবর্তে মুখস্থ করে রাখতেন।
লেখার উপকরণের মতোই তখনকার সময়ে লেখকেরও ছিলো অনেক অভাব। তাই যেসব লেখক ছিলেন তাঁরা কুরআন সংকলনে ব্যস্ত থাকায় হাদীস সংকলন করেননি। কিন্তু পরবর্তী সময়ে ইহা হয়েছে নির্ভুল তত্ত্ব ও তথ্যের মাধ্যমে সংকলিত।
সর্ব প্রথম হাদীসশাস্ত্র সংকলন করার মহৎ কাজে কে ব্রতী হয়েছেন তা নিদৃষ্ট করে বলা মুশকিল। তবে পরবর্তী মুহাদ্দিসীনে কোরামের মতামত অনুযায়ী-
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) ও হযরত রাফে ইবনে খুদাইজ(রাঃ) সর্ব প্রথম হাদীস শাস্ত্র সংকলন করার ব্যাপারে বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা সহকারে হাদীস সংকলনের কাজ শুরু করেন। এ সময় অনেক সাহাবীই হাদীস সংকলনে আপন শক্তি ব্যয় করেন। তাঁদের অব্যাহত এ গতি হযরত ওমর ইবনে আব্দুল আযীযের সময়কাল পর্যন্ত অতঃপর তিনি মদীনার কাজী আমর ইবনে হাজমকে হাদীস সংকলনের নির্দেশ প্রদান করেন।
এ ছাড়া সাধারণ রাষ্ট্রসমূহে তিনি মুহাদ্দিস, উলামায়ে কেরামসহ সকল সুধী মহলে সঠিক হাদীস সংকলনের নির্দেশ দেন। এ সময় থেকেই প্রধানত হাদীস লিখন শুরু হয়। সংকলিত হয় মহানবীর হাদীসের অমর বাণী। যা আমাদের জীবন বিধানকে ইসলামী মূল্যবোধের স্বর্গীয় ছাঁচে গড়তে অতুলনীয় মাধ্যম।
এদিক থেকে হযরত ওমর ইবনে আব্দুল আযীযকে প্রথম সংকলনকারী না বললেও প্রথম বাস্তব উৎসাহ প্রদানকারী ও হাদীস সংকলনের যথার্থ সাহায্যকারী বলা যায়। আর ইবনে শিহাব যহরীই হলেন প্রথম রূপকার।
প্রখ্যাত মুহাদ্দেসীনে কেরাম ও বিখ্যাত আলেমগণ আল-হাদীসের উদ্ভাবন ও ক্রমবিকাশের ইতিহাস আলোচনা করতে গিয়ে হাদীসের তিনটি স্তর বর্ণনা করেছেন- ১.লিখন পদ্ধতি, ২.সংকলন পদ্ধতি, ৩.অনুচ্ছেদকরণ পদ্ধতি।
লিখন পদ্ধতিঃ খুলাফায়ে রাশেদীনের সময় কালে নিজস্ব উদ্যোগে অনেকেই বেশ কিছু হাদীস লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন।
সংকলন পদ্ধতিঃ হযরত ওমর ইবনে আব্দুল আযীযের নির্দেশে স্বনামধন্য তাবেয়ী ইমাম ইবনে শিহাব যুহরীই সর্বপ্রথম মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাদীস মালা সংকলন করেন।
অনুচ্ছেদকরণ পদ্ধতিঃ ইবনে হাজার আসকালানী (রহঃ) বলেন, ইবনে শিহাব যুহরী (রহঃ) সর্বপ্রথম দ্বিতীয় খলীফা ওমরের নির্দেশে হাদীস অনুচ্ছেদকরণ করেন। কারো কারো মতে ইবনে জুরাই সর্বপ্রথম হাদীসের অনুচ্ছেদকরণ করেন। (অবশ্যই তাবেঈগণ হাদীস লিখে রাখতেন)।
যুগে যুগে হাদীস সংকলিত হয়েছে, পঞ্চম শতাব্দীতে এসে বিখ্যাত হাদীস গ্রন্থ রচনার মধ্য দিয়ে তা পূর্ণতা লাভ করেছে। আর বর্তমান সময়েও চলছে হাদীস শাস্ত্রের উপর বিপুল গবেষণা। যাতে শক্তিশালী হচ্ছে হাদীস শাস্ত্র।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন