মুসলিম জীবনের তিনটি পবিত্র রজনীর মধ্যে লাইলাতুল মি'রাজ বা মি'রাজের রাত অন্যতম। অন্য দু'টি রাত হলো লাইলাতুল ক্বদর এবং লাইলাতুন নিছফি মিন শা'বান।
নবুয়তের দশম বর্ষে ২৬ শে রজবের দিবাগত রাত ২৭ শে রজবে আল্লাহ তা'আলা তাঁর প্রিয় হাবীব হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা (সাঃ) কে স্বশরীরে জিব্রাইলের (আঃ) সাথে বোরাক্ব নামক এক অপরূপ যানে পবিত্র কা'বা থেকে বাইতুল মুক্বাদ্দাস পর্যন্ত ভ্রমণ করান।
নবী করীম (সাঃ) সেখানে মসজিদের দরজায় খুঁটির সাথে বোরাক বেঁধে যাত্রা বিরতি করেন এবং সকল নবীর ইমাম হয়ে নামায আদায় করেন।
এরপর সে রজনীতেই তাঁকে বায়তুল মাকদাস থেকে অল্প সময়ের মধ্যে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, এভাবে একে একে সাত আসমান ভ্রমণ করে 'সিদরাতুলমুনতাহা'য় পৌঁছেন। সেখান থেকে মালায়ে আলার বিভিন্ন মঞ্জিল অতিক্রম করে আরশে আজীমে পৌঁছেন।
তিনি আল্লাহর এত নিকটবর্তী হন যে, উভয়ের মধ্যে দুটি ধনুক বা তারও কম ব্যবধান ছিল। সে সময় আল্লাহ তা'আলা তাঁকে যা কিছু দেয়ার দিয়ে দেন, যা ইচ্ছা ওহী নাযিল করেন এবং সে সময় তাঁর উম্মতের জন্য প্রথমেে পঞ্চাশ ওয়াক্তের নামাজ ফরয হওয়ার নির্দেশ হয়। অতঃপর তা হ্রাস করে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত মে'রাজের রাতে ফরয করে দেয়া হয়। এ দ্বারা সব এবাদতের মধ্যে নামাযের বিশেষ গুরুত্ব ও শ্রষ্ঠত্ব প্রমাণিত হয়।
আল্লাহর রাসূল (সাঃ) কে জান্নাত এবং জাহান্নাম দেখানো হয়।রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বচক্ষেজান্নাত ও জাহান্নাম পরিদর্শন করেন। বেহেশত, দোযখ, আখিরাত এগুলি সম্পর্কে তো রাসূল (সাঃ) আগেও অবগত ছিলেন জিবরাঈলের মাধ্যমে শুনে শুনে বলতেন এবার দেখে দেখে বলবেন।
আল্লাহ তা'আলার সাথে রসূল (সাঃ) এর কথাবার্তা বা সংলাপের কিছু অংশ আমরা আত্তাহিয়াতুতে পড়ি। মিরাজের মাধ্যমে আল্লাহ তা'আলা মানুষের অসাধারণ শক্তির সম্ভাবনা জানিয়ে দিয়েছেন।
আল্লাহর দিদার এবং সান্নিধ্য লাভ করে আমাদের মহানবী (সাঃ) মাআরিফাতের শীর্ষে পৌঁছেছিলেন। কিন্তু ঐ উৎকর্ষতা লাভ করে তিনি দেওয়ানা, মজযুব বা তন্দ্রাগ্রস্ত হননি।
এ জগতের চোখ দিয়ে মানুষ আল্লাহকে দেখতে পারে না। এটাই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের মত। পরকালের সব জান্নাতী এ নিয়ামত লাভ করবেন। মি'রাজ রজনীতে বিশ্বনবী (সাঃ) যে সাক্ষাৎ লাভ করেছেন তা প্রকৃত পক্ষে পরকালেরই সাক্ষাৎ। কারণ সে কথাবার্তা এ জগতে নয়; আরশে হয়েছে।
মানুষের সর্বোচ্চ আকাংঙ্খা আল্লাহর দিদার। কিন্তু রাসূল (সাঃ) আল্লাহর দিদার পেয়েও সেখানে থাকলেন না। এর কারণ তাঁর মধ্যে ব্যক্তি চেতনা যতটুকু ছিল তার চেয়ে বেশি ছিল সমষ্টি -চেতনা। তাই তিনি সেখানে একা থাকতে চাননি।
ফিরে এসে তিনি হিজরত করলেন এবং মদীনায় প্রতিষ্ঠা করলেন ইসলামী রাষ্ট্র। তাঁর তেইশটি জিহাদ কিন্তু মি'রাজের পর মি'রাজের পূর্বে নয়।
মি'রাজ প্রমাণে পাঁচটি সাক্ষীঃ
১. আল্লাহ তা'আলা ও কোরআন মাজীদ।
২. বিশ্বনবী ও তাঁর হাদীস শরীফ।
৩. জিব্রাঈল, মিকাঈল (আঃ) ও অন্যান্য ফেরেশতাগণ।
৪. হযরত আবুবকর সিদ্দীক (রাঃ)।
৫. বত্রিক নামক এক খ্রিস্টান ধর্মযাজক।
২. বিশ্বনবী ও তাঁর হাদীস শরীফ।
৩. জিব্রাঈল, মিকাঈল (আঃ) ও অন্যান্য ফেরেশতাগণ।
৪. হযরত আবুবকর সিদ্দীক (রাঃ)।
৫. বত্রিক নামক এক খ্রিস্টান ধর্মযাজক।
ঈমানের কথা যা কিছু আমরা শুনি যেমনঃ আল্লাহ আছেন, জান্নাত আছে, জাহান্নাম আছে, এসব কিছু আসলে আছে কিনা? কেউ তো কোন দিন দেখেনি! এখন আর এরকম সন্দেহ করার অবকাশ নেই। কারণ এগুলো আছে তা এমন একজন দেখে এসে বলেছেন, যাকে দুনিয়ার কেউ মিথ্যাবাদী বলতে পারেনি। ঘোর শত্রু পর্যন্ত যাকে মিথ্যুক বলতে পারেনি। যাকে কেউ কোন দিন মিথ্যুক বলতে পারবে না।
"আসসালাতু মি'রাজুল মু'মিনীন" অর্থাৎ সালতই হচ্ছে মু'মিনের জন্য মি'রাজ স্বরূপ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন