ইসলামী আক্বিদা-বিশ্বাস মতে কাল বা সময়ের প্রতিটি সেকেন্ড, মিনিট, ঘন্টা, দিন, সপ্তাহ ও মাস বরকতময় ও কল্যাণপূর্ণ।
হযরত উসামা ইবনে জায়েদ (রাঃ) বলেন, রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, শা'বান হচ্ছে আমার মাস আর রমযান হল আল্লাহ তা'আলার মাস। সন্মানিত ব্যক্তির দিকে কোনো বস্তুর সম্বন্ধ করা হলে, ওই বস্তুর মান বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। সে হিসেবে তিনি যেমন আল্লাহ তা'আলার পর সবার চেয়ে উত্তম ও শ্রষ্ঠ, তেমনিভাবে এই শা'বান মাসটিও উত্তম ও শ্রেষ্ঠ। বরকতময় ও গুরুত্বপূর্ণ একটি মাস।
কিন্তু মানুষ এর ফজিলত সম্পর্কে উদাসীন। হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে এসেছে, রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, বান্দার সমস্ত আমল পরওয়ারদিগারে আলমের নিকট পেশ করা হয়। সুতরাং আমি চাই, আমার আমল; আমি রোজা রেখেছি এমন অবস্থায় ওঠানো হোক। -(বায়হাকী,১৪৬)
এ মাসে দিবা-রাত্রি এবাদতে নিমগ্ন থাকা দরকার, যাতে পরকালের পথ সুগম হয়। এক হাদীসে ইরশাদ হয়েছে, যদি তোমরা [রমযান ব্যতীত অন্য মাসে ] রোজা রাখার আগ্রহ থাকে, তা হলে শা'বান মাসে রেজা রাখ।
কেননা এমাসের অনেক ফজিলত রয়েছে। শা'বান অর্থ বিস্তৃত হওয়া, বিস্তার লাভ করা, প্রসারিত হওয়া আর যেহেতু এ মাসে আল্লাহ তা'আলার রহমত বিস্তৃত হয়। তাই এমাসকে শা'বান বলা হয়। শা'বানের পঞ্চদশ রাত বা লাইলাতন নিসফি মিন শা'বান একটি বরকতময় রজনী। যার উল্লেখ আমরা হাদীস শরীফে পাই।
প্রায় দশজন সাহাবা থেকে এমন কিছু হাদীস বর্ণিত আছে, যাতে এ রাতের বৈশিষ্ট্য ও ফজীলতের কথা বলা হয়েছে। তাই এরাতের ফজীলতকে ভিত্তিহীন বলা নিতান্তই ভুল।
১৩জন ছাহাবী থেকে বর্ণিত শবে বরাত সম্পর্কিত ১৪টি গ্রহণযোগ্য হাদীছ
*শবে বরাত ليلة البراءة (গুনাহ থেকে মুক্তি/ক্ষমা লাভের রাত) সম্পর্কে 'অল্পবিদ্যা ভয়ঙ্কর' সম্প্রদায়ের সালাফী ও তাদের অনুগামী আহলে হাদীস শায়খদের যে যাই বলুক না কেন, এটি একটি প্রমাণিত সত্য যে, ১২ জনের অধিক ছাহাবী থেকে ১৫টিরও বেশি সনদযুক্ত مُسند হাদীছগ্রন্তে শবে বরাতের ফজিলত (শ্রেষ্ঠত্ব) সম্পর্কিত ২০টির অধিক হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। সনদ বিচারে এসবের কিছু মকবুল (গ্রহণযোগ্য) দুর্বল হলেও বাকীগুলো সবল। একই সাথে এটাও প্রমাণিত সত্য যে, সালাফে সালেহীনের অনেকে এ রাতে নফল ইবাদত করেছেন। বিষয়টি সালাফীদের মরহুম شيخ (ফার্সীতে পীর) ছাহেব ইবনে তাইমিয়া ও বিখ্যাত হাম্বলী আলেম ইবনে রজবও স্বীকার করেছেন।
ইবনে তাইমিয়ার ফতোয়া সমষ্টির ২৩তম খন্ডের ১৩২ নম্বর পৃষ্টায় বলা হয়েছেঃ
«وأما ليلة النصف فقد روي في فضلها أحاديث وآثار ونقل عن طائفة من السلف أنهم كانوا يصلون فيها، فصلاة الرجل فيها وحده قد تقدمه فيه سلف وله فيه حجة فلا ينكر مثل هذا»
"তবে শবে বরাতের ফজিলত সম্পর্কে অনেক হাদীছ ও আছার (ছাহাবা ও তাবেয়ীদের কথা)
বর্ণিত হয়েছে। সালাফের একটি জামায়াত এ রাতে নফল নামাজ পড়তেন বলেও বর্ণিত হয়েছে। অতএব, এ রাতে কারো জামায়াতবিহীন নফল নামাজ আদায়ে তার জন্য পূর্বসুরীদের আমল বিদ্যমান রয়েছে এবং এটা তার জন্য দলীল বটে। তাই এ ধরণের কাজ অস্বীকার করা যায় না।"
«وأما ليلة النصف فقد روي في فضلها أحاديث وآثار ونقل عن طائفة من السلف أنهم كانوا يصلون فيها، فصلاة الرجل فيها وحده قد تقدمه فيه سلف وله فيه حجة فلا ينكر مثل هذا»
"তবে শবে বরাতের ফজিলত সম্পর্কে অনেক হাদীছ ও আছার (ছাহাবা ও তাবেয়ীদের কথা)
বর্ণিত হয়েছে। সালাফের একটি জামায়াত এ রাতে নফল নামাজ পড়তেন বলেও বর্ণিত হয়েছে। অতএব, এ রাতে কারো জামায়াতবিহীন নফল নামাজ আদায়ে তার জন্য পূর্বসুরীদের আমল বিদ্যমান রয়েছে এবং এটা তার জন্য দলীল বটে। তাই এ ধরণের কাজ অস্বীকার করা যায় না।"
-ইবনে রজবের লতায়েফুল মাআরিফের ১৬১ নম্বর পৃষ্টায় বলা হয়েছেঃ
«وليلة النصف من شعبان كان التابعون من أهل الشام كخالد بن معدان ومكحول ولقمان بن عامر وغيرهم يعظمونها ويجتهدون فيها في العبادة، وعنهم أخذ الناس فضلها وتعظيمها»
"শবে বরাতের রাতকে খালেদ বিন মা'দান, মাকহূল ও লোকমান বিন আমেরসহ শামের অন্যান্য তাবেয়ীগণ সম্মান জানাতেন এবং এতে ইবাদতের প্রতি মনোনিবেশ করতেন। লোকজন শবে বরাতের প্রতি সম্মান প্রদর্শন ও এর ফজিলত তাদের কাছ থেকেই গ্রহণ করেছেন।"
«وليلة النصف من شعبان كان التابعون من أهل الشام كخالد بن معدان ومكحول ولقمان بن عامر وغيرهم يعظمونها ويجتهدون فيها في العبادة، وعنهم أخذ الناس فضلها وتعظيمها»
"শবে বরাতের রাতকে খালেদ বিন মা'দান, মাকহূল ও লোকমান বিন আমেরসহ শামের অন্যান্য তাবেয়ীগণ সম্মান জানাতেন এবং এতে ইবাদতের প্রতি মনোনিবেশ করতেন। লোকজন শবে বরাতের প্রতি সম্মান প্রদর্শন ও এর ফজিলত তাদের কাছ থেকেই গ্রহণ করেছেন।"
-নীচে আমি বিস্তারিত সূত্রসহ শবে বরাতের ফজিলত সম্পর্কে বর্ণিত এক ডজনের বেশি হাদীছ উল্লেখ করবো। সূত্রগ্রন্থের সাথে ব্রাকেডে যে নম্বরগুলো দেয়া হবে, সেগুলো সংশ্লিষ্ট হাদীছের নম্বর।
-০১. হযরত আলী রাজিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, "যখন অর্ধ শা'বানের রাত তথা শবে বরাত উপস্থিত হবে, তখন তোমরা উক্ত রাতে সজাগ থেকে ইবাদত-বন্দেগী করবে এবং দিনের বেলায় রোজা রাখবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক উক্ত রাতে সূর্যাস্তের সময় পৃথিবীর আকাশে খাছ রহমত নাজিল করেন। অতঃপর ঘোষাণা করতে থাকেন, কোন ক্ষমা প্রার্থনাকারী আছো কি? আমি ক্ষমা করে দিব। কোন রিযিক প্রার্থনাকারী আছো কি? আমি তাকে রিযিক দান করব। কোন মুছিবগ্রস্ত ব্যক্তি আছো কি? আমি তার মুছিবত দূর করে দিব। এভাবে সুবহে ছাদিক পর্যন্ত ঘোষাণা করতে থাকেন" সুনানে ইবনে মাজা (১৩৮৮) ও দাইলামীর মুসনদুল ফিরদাউস (১০০৭)
-০২. হযরত উছমান বিন আবুল আছ রাজিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, "যখন অর্ধ শা'বানের রাত তথা শবে বরাত উপস্থিত হয়, তখন আকাশ থেকে একজন ঘোষক ঘোষাণা করতে থাকেন, কোন ক্ষমা প্রার্থনাকারী আছো কি? আমি ক্ষমা করে দিব। কোন রিযিক প্রার্থনাকারী আছো কি? আমি তাকে রিযিক দান করব। তো এ রাতে সবাইকে তার প্রার্থিত বিষয় দান করা হয়। তবে ব্যভিচারী ও মুশরিককে নয়।" বাইহাকীর শোআবুল ঈমান (৩৮৩৬) ও খরায়েতীর মাসাইয়ুল আখলাক (৪৯০)
-০৩. হযরত আবু হুরাইরা রাজিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, "যখন অর্ধ শা'বানের রাত তথা শবে বরাত উপস্থিত হয়, তখন আল্লাহ তাঁর বান্দাদের ক্ষমা করে দেন। তবে হিংসুক ও মুশরিককে নয়।" বাজ্জারসূত্রে কাশফুল আসতার (২০৪৫) ও খতীবের তারীখে বাগদাদ (১৪/২৮৫)
-০৪. হযরত আয়েশা রাজিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, "যখন অর্ধ শা'বানের রাত তথা শবে বরাত উপস্থিত হয়, তখন আল্লাহ কলবের (ছাগল পালনের জন্য প্রসিদ্ধ একটি গোত্র) ছাগলদের পশমের চেয়ে অধিক বান্দার গুনাহ ক্ষমা করে দেন।" সুনানে তিরমিযী (৭৩৯), সুনানে ইবনে মাজা (১৩৮৯), মুসনদে আহমদ (২৬০৬০), মুসনদে আবদে ইবনে হুমাইদ (১৫০৯), বাইহাকীর শোআবুল ঈমান (৩৮২৪)
-০৫. হযরত আবু বকর রাজিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত, নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, "যখন অর্ধ শা'বানের রাত তথা শবে বরাত উপস্থিত হয়, তখন আল্লাহ দুনিয়ার আকাশে বিশেষ রহমত নাজিল করেন। অতঃপর তিনি তাঁর বান্দাদের ক্ষমা করে দেন। তবে হিংসুক ও মুশরিককে নয়।" মুসনদে বাজ্জার (৮০) ও বাইহাকীর শোআবুল ঈমান (৩৮২৭)
-০৬. হযরত আবু মূসা রাজিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, "অর্ধ শা'বানের রাত তথা শবে বরাতে আল্লাহ পাক দুনিয়াবাসীর প্রতি বিশেষ রহমতের দৃষ্টি দেন। অতঃপর তিনি তাঁর বান্দাদের সবাইকে ক্ষমা করে দেন। তবে হিংসুক ও মুশরিককে নয়।" সুনানে ইবনে মাজা (১৩৯০)। উল্লেখ্য, সালাফীগুরু আলবানী নাকি তাঁর সিলসিলা ছহীহাতে (১১৪৪) এ হাদীছকে ছহীহ বলে দাবি করেছেন
-০৭. হযরত আবু ثعلبة ছা'লাবা রাজিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, "অর্ধ শা'বানের রাত তথা শবে বরাতে আল্লাহ পাক তাঁর বান্দাদের প্রতি বিশেষ রহমতের দৃষ্টি দেন। অতঃপর তিনি মুমিনদের ক্ষমা করে দেন এবং কাফিরদের অবকাশ দেন। আর হিংসা না ছাড়া পর্যন্ত হিংসুকদের বিষয়টি ঝুলিয়ে রাখেন।" তবরানীর মুজমে কবীর (২২/২২৪) ও মুজমে ইবনে কানে (১/১৬০)
-০৮. হযরত আবদুল্লাহ বিন আব্বাস রাজিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, "আল্লাহ পাক প্রতিবছর একবার কা'বা শরীফের প্রতি বিশেষভাবে তাকান। আর সে সময়টা হচ্ছে অর্ধ শা'বানের রাত তথা শবে বরাতে। আর ওই সময় কা'বার প্রতি মুমিনের হ্রদয় অনুরাগী হয়ে উঠে।" দাইলামীর মুসনদুল ফিরদাউস (৫৩৯)
-০৯. হযরত আবদুল্লাহ বিন উমর রাজিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, "পাঁচ রাতে আল্লাহর কাছে দোয়া প্রত্যাখ্যাত হয় না। ১. রজবের প্রথম রাত, ২. অর্ধ শাবানের রাত (শবে বরাত), ৩. জুমার রাত, ৪. ঈদুল ফিতরের রাত ও ৫. ঈদুল আজহার রাত।" মুছন্নফে আবদুর রজ্জাক (৭৯২৭) ও বাইহাকীর শোআবুল ঈমান।
-১০. হযরত হযরত আবু উমামা রাজিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, "পাঁচ রাতে আল্লাহর কাছে বান্দার দোয়া প্রত্যাখ্যাত হয় না। ১. রজবের প্রথম রাত, ২. অর্ধ শাবানের রাত (শবে বরাত), ৩. জুমার রাত, ৪. ঈদুল ফিতরের রাত ও ৫. ঈদুল আজহার রাত।" দাইলামীর মুসনদুল ফিরদাউস (২৯৭৫) ও ইবনে আসাকিরের তারীখে দেমেশক (১০/৪০৮)
-১১. হযরত আবদুল্লাহ বিন মাসউদ রাজিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, "অর্ধ শা'বানের রাত তথা শবে বরাতে মদখোরের মুখ থেকে নির্গত 'লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ' ছাড়া অন্য সকলের 'লা-ইলাহা ইল্লল্লাহ আল্লাহর কাছে কবূল হয়ে যায়।" দাইলামীর মুসনদুল ফিরদাউস (৭৮৩৭)
-১২. হযরত আবদুল্লাহ বিন মাসউদ রাজিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, "অর্ধ শা'বানের রাত তথা শবে বরাতে আল্লাহ পাক তাঁর সৃষ্টির প্রতি বিশেষ রহমতের দৃষ্টি দেন। অতঃপর তিনি তাঁর বান্দাদের সবাইকে ক্ষমা করে দেন। তবে হিংসুক ও মুশরিককে নয়।" ছহীহ ইবনে হিব্বান (৫৬৬৫), বাইহাকীর শোআবুল ঈমান (৬৬২৮) ও তবরানীর মু'জমে কবীর (২০/১০৮)
-১৩. হযরত আবদুল্লাহ বিন আমর রাজিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, "অর্ধ শা'বানের রাত তথা শবে বরাতে আল্লাহ পাক তাঁর সৃষ্টির প্রতি বিশেষ রহমতের দৃষ্টি দেন। অতঃপর তিনি তাঁর বান্দাদের সবাইকে ক্ষমা করে দেন। তবে হিংসুক ও আত্মহত্যাকারীকে নয়।" মুসনদে আহমদ (৬৬৪২)
-১৪. হযরত আয়েশা রাজিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি একদা হুযুর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে রাতযাপন করছিলাম। মধ্যরাতে আমি উনাকে বিছানায় না পেয়ে মনে করলাম, তিনি হয়তো অন্য কোন আহলিয়ার কক্ষে তাশরীফ নিয়েছেন। অতঃপর আমি তালাশ করে উনাকে জান্নাতুল বাক্বীতে (মসজিদে নববীর নিকটস্থ বিখ্যাত কবরস্থান) পেলাম। সেখানে তিনি উম্মতের জন্য আল্লাহ পাকের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছিলেন। এ অবস্থা দেখে আমি স্বীয় কক্ষে ফিরে এলে তিনিও ফিরে এলেন এবং বললেন, "তুমি কি মনে করেছো যে, আল্লাহ ও আল্লাহর রসূল তোমাকে তোমার অধিকার বঞ্চিত করবেন?" আমি বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ! না। আমি ধারণা করেছিলাম যে, আপনি হয়তো আপনার অন্য কোন আহলিয়ার কক্ষে তাশরীফ নিয়েছেন। তখন রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, "নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক শা'বানের ১৫ তারিখ রাত্রিতে পৃথিবীর আকাশে খাছ রহমত নাজিল করেন। অতঃপর তিনি কলব গোত্রের ছাগলের গায়ে যত পশম রয়েছে, তার চেয়ে বেশী সংখ্যক বান্দাকে ক্ষমা করে দেন।" সুনানে ইবনে মাজা (১৩৮৯), মুসনদে আহমদ (২৬০৬০), বাইহাকীর শোআবুল ঈমান (৩৮২৪)
*শবে বরাতসহ যেকোনো বিষয়ের বিশেষত্ব ও ফযীলত প্রমাণের জন্য ১৪টি নয়; একটি হাদীছই যথেষ্ট।
*পুনশ্চঃ এক ভদ্রলোক বলিলেন, শবে বরাতে ইবাদতের সব হাদীস জঈফ৷ তাই এ রাতে ইবাদত পরিত্যাজ্য৷ উত্তরে আমি লিখিলামঃ ভদ্র লোক সহীহ-জঈফের নীতিমালাটা কোন্ সহীহ হাদীসে পাইয়াছেন, সেটির সূত্রটা কি উল্লেখ করিবেন? যদি করিতে না পারেন, তাহা হইলে তিনি কার তাকলীদ করিয়া থাকেন? আর তাছাড়া তিনি তাহার কোরআন ও সহীহ হাদীস ছাড়া আর কিছু না মানিবার দাবিটি কিভাবে প্রতিষ্ঠিত করিবেন?
*আল্লাহ রব্বুল ইজ্জত আমাদেরকে তাঁর ক্ষমাপ্রাপ্ত বান্দাদের অন্ততর্ভূক্ত করুন এবং হিংসা, গৌরব ও অহঙ্কারের মত আত্মঘাতী রোগসমূহ থেকে মুক্ত রাখুন। এ রাতের বিশেষ ফজিলত থাকার কারণেই খায়রুল কুরুন তথা ইসলামের সোনালী যুগ থেকেই মানুষ এ রাতের ইবাদতের প্রতি বিশেষভাবে গুরুত্ব প্রদান করে আসছেন। অতএব এ রাতের ইবাদতকে বিদআত কিংবা অমূলক ও ভিত্তিহীন বলা মোটেই সমীচীন নয়।
এ সম্পর্কে সঠিক সিদ্ধান্ত এই যে, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ও বরকতময় রজনী। এ রাতে জাগ্রত থেকে ইবাদত করা অবশ্যই সাওয়াবের কাজ। এবং বাস্তবেও এর গুরুত্ব অপরিসীম। অবশ্য এ কথা স্বতঃসিদ্ধ যে, এরাতে ইবাদত করার বিশেষ কোনো পদ্ধতি নির্ধারিত নেই। যেকোনো ইবাদত করা যেতে পারে।
মহানবী (সাঃ) একবার এরাতে 'জান্নাতুল বাকি'তে গিয়েছিলেন। এটি মদিনার প্রাচীন কবরস্থান, যা মসজিদে নববীর অতি নিকটে অবস্থিত। এক হাদীসে এসেছে রাসুল (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, সুসংবাদ ওই ব্যক্তির জন্য যে শা'বানের ১৫ তারিখ রাতে নেক আমল করবে। অন্য এক হাদীসে রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি শাবানের ১৫ তারিখে রোজা রাখবে। কখনো তাকে অগ্নি স্পর্শ করবে না।
এ রাতে মহান আল্লাহ তা'আলার পক্ষ হতে অনেক বরকত নাজিল হয়। অসংখ্য নেকী দান করা হয়। অনুগ্রহ ও দয়ার ভান্ডার খুলে দেয়া হয়। গোনাহ সমূহ ক্ষমা করে দেয়া হয়। এক হাদীসে নবী করীম (সাঃ) বলেছেন, যখন শা'বান মাসের ১৫ই রজনী আসে তখন তোমরা রাত্র জাগরণ কর অর্থাৎ রাতে নফল ইবাদত কর। বিশেষ ভাবে নফল নামায পড় এবং পরের দিন রোযা রাখ। এই রোযা রাখা মোস্তাহাব এবং এই রোযা এক দিন।
নবী করীম (সাঃ) এ রাতে খুব বেশী ইবাদত করতেন এবং অন্যদেরকেও অনুপ্রাণিত করতেন। তিনি যে শুধু এ রাতেই বেশী ইবাদত করতেন তা নয়, অন্যান্য রাতেও ঘন্টার পর ঘন্টা ইবাদতে কাটিয়ে দিতেন। এটা বরকতময় ও তাৎপর্যপূর্ণ রাত। এরাতে হৈ-চৈ করার জন্য নয় কিংবা জমায়েত হয়ে মেলা বসানোর জনও নয়। এধরণের রাত এজন্যই আসে যে, নির্জনে বসে আমরা আল্লাহ তা'আলার সাথে নিবিড় সম্পর্ক স্হাপন করবো। হে আল্লাহ! আমাদের সকলকে এ তাওফিক দান করুন। আমীন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন