মানবজাতির হেদায়েতের জন্য যুগে যুগে নবী - রাসূলদের পাঠানো, আল্লাহ তা'আলার বড়ই এহসান। পথহারা জাতিকে হেদায়েতের জন্যই আল্লাহ তা'আলা তাঁর সর্বশেষ পয়গাম্বর নবী করীম (সাঃ)- কে দুনিয়াতে পাঠিয়ে ছিলেন। তিনি শান্তির শ্বাশত পয়গাম নিয়ে পৃথিবীতে আবির্ভূত হন এবং দুনিয়াব্যাপী শান্তি, শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করে যান। কিন্তু আল্লাহ তা'আলার প্রিয় রাসূলের প্রদর্শিত পথ ছেড়ে ভিন্ন পথের সন্ধান করার স্বাভাবিক পরিণতিতেই আজকে সারা দুনিয়ায় অশান্তি ও ফাসাদের রাজত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তবে চিরদিন এ অশান্তি, অরাজকতা চলতে দেয়া যায় না।
মূলত তিনটি কারণে এ অশান্তির জন্ম হয় এবং তা ব্যক্তিগত, সামাজিক ও জাতীয় পর্যায়ে বিস্তার লাভ করে। সম্পদের প্রাচুর্য ও এর প্রতি অতিরিক্ত মোহ, বংশ মর্যাদার গৌরব ও অহংকার এবং ক্ষমতার দাপট। এই তিনটি উপসর্গই ব্যক্তি থেকে শুরু করে দেশ ও দুনিয়াব্যাপী অশান্তি সৃষ্টি করে। তাই এ তিনটি রোগ দমন করতে পারলেই পৃথিবীতে আবারো সেই সোনালী যুগের স্বর্গীয় শান্তি ফিরে আসবে। অশান্ত পৃথিবী হবে শান্ত।
তিনটি উপসর্গের চিকিৎসাঃ সম্পদের প্রাচুর্য ও এর প্রতি অতিরিক্ত আকর্ষণ বহু অপরাধ ও অশান্তির জন্ম দেয়। এ ব্যাধির ভিতর লুকিয়ে আছে অনেক অকল্যাণ। ধন-সম্পদের প্রতি আসক্তি কমানোর জন্য নবী করীম (সাঃ) যে পন্থা দেখিয়ে গেছেন তাহল, মাল বেশী বেশী করে দান করা, আল্লাহর রাস্তায় খরচ করা। কারণ, মানুষের মনে যখন সম্পদের লেভ ও আকর্ষণ বেড়ে যায় তখন সে অন্যায়ভাবে সম্পদ উপার্জনের পিছনে ব্যস্ত হয়ে উঠে।
টাকার ধর্ম হল এই যে, তা যতই খরচ করা হবে ততই আরাম হবে। যতই জমা করা হবে ততই পেরেশানী বাড়বে। এজন্যই নবী করীম (সাঃ) বলেছেন, তোমরা খরচ কর, খরচ কর। মাল খরচ করতে থাকলে আল্লাহ তা'আলা সেখানে বরকত নাযিল করতে থাকেন। আল্লাহর রাস্তায় দান করলে তা আল্লাহ তা'আলার কাছে জমা হয় এবং আল্লাহ তা'আলার রহমত নাযিলের উছিলা হয়।
পৃথিবীতে ফাসাদ সৃষ্টির আর একটি উপসর্গ হল, বংশ মর্যাদার গৌরব। আল্লাহ তা'আলার কাছে এই বংশ গৌরবের কোন মূল্য নেই। বরং আল্লাহ তা'আলার ঘোষণা হল, "মুমিনদের মধ্যে যে যত মুত্তাকী-পরহেজগার, তাঁর সম্মান আল্লাহ তা'আলার নিকট তত বেশী।
অশান্তির আর একটি উৎস হল শক্তি। শারীরিক, অর্থনৈতিক, সামরিক যেকোনো শক্তিই হোকনা কেন এর দ্বারা দুনিয়াতে চরম অশান্তি সৃষ্টি হয়। শক্তির লড়াইয়ে আজ সারাটা দুনিয়া বিপর্যস্ত। ফাসাদে ভরে গেছে পৃথিবী। শক্তির দাপটে তছনছ হচ্ছে বিশ্ব মানবতা। দুনিয়ার যেকোন শক্তি আরেকটি শক্তির উপর আঘাত করলে প্রতিপক্ষ এর দশগুণ শক্তি নিয়ে প্রতিঘাত করে। প্রতিশোধ নিতে তার সমস্ত ক্ষমতা ব্যয় করে। এতে দুনিয়াতে অশান্তির সৃষ্টি হয়। জানমালের ব্যাপক ক্ষতি হয়। তাই শক্তির এই মহড়াকে দমন করার জন্য নবী করীম (সাঃ) এক তরিকা বাৎলে দিয়েছেন। আর তা হল ক্ষমা। ক্ষমা একটা মহৎ গুণ। এর দ্বারা শক্তির ভারসাম্য রক্ষা হয়। সম্মান আরো বাড়ে।
প্রকৃত বিনয় ও নম্রতার মধ্যে রয়েছে দুনিয়া ও আখেরাতের কামিয়াবি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন