শারীরিক এবং আর্থিক সঙ্গতিপন্ন ব্যক্তির জন্য বিবাহ ফরয। চিরকুমার জীবনযাপন ব্যক্তির শারীরিক, মানসিক এবং চারিত্রিক স্বাস্হ্যের জন্য পীড়নমূলক,অস্বাভাবিক এবং অকল্যাণকর। এতে মঙ্গলের চেয়ে অমঙ্গলই বেশী হয়।
নারী-পুরুষের পরস্পরের প্রতি আকর্ষণ অতি স্বাভাবিক। নারীর দেহে অম্ল, নরদেহে ক্ষার পদার্থ বেশী। তাই চুম্বকের ন্যায় একটি আর একটিকে আকর্ষণ করে। এই আকর্ষণী প্রকৃতিকে বিকর্ষণে পরিণত করার পরিবর্তে আকর্ষণ ধারাকে বিবাহের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা সঙ্গত। মানব প্রকৃতির বিরুদ্ধে কাজ করতে চাইলে কোন - না - কোন ক্ষেত্রে অস্বাভাবিকতা দেখা দেবেই।
হযরত উমর (রাঃ) তাঁর কন্যাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন যে, একটি মেয়ে কতদিন খুব বেশী অস্বস্তি অনুভব না করে স্বামীর সঙ্গবিহীন থাকতে পারে? কন্যা তাঁকে বলেছিলেন, চার মাস। হযরত উমর (রাঃ) ফরমান জারি করে দিলেন যে, প্রতিটি সৈনিককে অবশ্যই প্রতি চার মাসের মধ্যে একবার করে স্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য ছুটি দিতে হবে। দেহতত্ত্ব এবং মনস্তত্ত্বের অত উন্নতি সত্বেও আজকালকার অতি উন্নত দেশের সেনাবাহিনীতে তেমন নীতি প্রচলিত নেই।
বিবাহ পদ্ধতির মাধ্যমে যৌন তৃষ্ণা নিবারণে শুধু যে জৈবিক তৃপ্তি লাভ হয়, তা নয়, এতে এক অনাবিল স্বর্গীয় আনন্দানুভূতি জাগে। শুধু মিলনের জন্য নারী-পুরুষের বিবাহ, তা নয়, আত্মিক মিলন, শান্তি ও আনন্দের জন্যও বিবাহ প্রয়োজন। একটি বিশেষ বয়সের পর যৌন তৃষ্ণা থাকে না। ষাট সত্তর বয়সের বৃদ্ধ ও বৃদ্ধার পরস্পরের প্রতি আকর্ষণ আঠারো বছরের বালক আর ষোল বছরের বালিকার আকর্ষণ অপেক্ষা কম নয়।
বৃদ্ধ ও বৃদ্ধার যৌনোত্তর মিলন আনন্দের স্তর অতিক্রম করে পরমানন্দের স্তরে পৌঁছে। তারা তখন পরস্পরের সান্নিধ্যের প্রয়োজন যৌবনে যতটুকু অনুভব ও কামনা করতেন, তার থেকে অনেক বেশী আশা করেন। পারস্পরিক দরদ ও অনুভূতি অত্যধিক তীব্র হলে যৌবনেও যৌন আনন্দ অপেক্ষা অতীন্দ্রিয় পরমানন্দ অনুভূত হয়।
প্রাচীন গ্রীক ও অন্যান্য বহু দেব-দেবীর যৌনাচার ছিল লাগামহীন। দেব-দেবীরা অপকর্ম করলে বলা হয় লীলা, আর ভক্তেরা করলে হয় পাপাচার। ফিতরাতের ধর্ম ইসলামেই যৌন প্রয়োজন ও আবেদনের স্বাভাবিকভাবে স্বীকার করে নিয়ে যৌন জীবনে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা হয়েছে।
পাশ্চাত্য জগতের অভিজ্ঞতার প্রেক্ষাপটে সমাজের অভিভাবকদের প্রচেষ্টা ও আলোচনার দ্বারা বিবাহ সংঘটিত হলে সে বিবাহের স্থায়িত্ব ও সাফল্য লাভের সম্ভাবনা অনেক বেশী হতো বলে মনে হয়।
লেখকঃ খতীব, আব্দুচ্ছালাম বাগেরহাটী, পিলখানা, ঢাকা।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন