ইসলামে হাদীসের গুরুত্ব। খতীব আব্দুচ্ছালাম বাগেরহাটী, পিলখানা, ঢাকা।

কুরআন মাজীদের পর দ্বীনে ইসলামের দ্বিতীয় উৎস হল হযরত নবী করীম (সাঃ)-এর হাদীস (বানী, কর্ম ও সম্মতি)। মূলতঃ কিতাবুল্লাহ ও হাদীসে রাসূল (সাঃ) হচ্ছে দ্বীনের ভিত্তি। হাদীস ব্যতীত শুধু কুরআন দ্বারা দ্বীনের পূর্ণরূপ বিকশিত হতে পারে না। 


উম্মতের বিভিন্ন ফিৎনা ও গোমরাহীর অন্যতম হল, "ইনকারে হাদীসের ফিৎনা"। অর্থাৎ এক শ্রেণির লোকেরা বলে থাকেন যে, একমাত্র কুরআনই দ্বীনের উৎস ও শরীয়তের দলীল। নবীর হাদীস দ্বীনের দলীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়। কুরআনই দ্বীনের ভিত্তি, হাদীস নয়, একথা বলা ইসলামের সাথে চরম-শত্রুতা বৈ কিছুই নয়। 


উম্মতের ঐকমত্যে কুরআন অবশ্যই পূর্ণাঙ্গ কিতাব এবং দ্বীন ও শরীয়তের মূল উৎস, কিন্তু তা' এক সংক্ষিপ্ত কিতাব এবং এর ব্যাখ্যা হওয়া দরকার। নবী করীম (সাঃ) হলেন কুরআনের ব্যাখ্যাকার এবং তাঁর হাদীস তথা কর্মবহুল জীবন কুরআনেরই ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ।


আল্লাহ তা'আলা পবিত্র কুরআনে বলেন -"এই কুরআন আপনার প্রতি নাজিল করেছি, যাতে মানুষের প্রতি অবতীর্ণ বিষয়গুলোকে আপনি স্পষ্ট করে দেন"-(সূরা নাহল-১৬ঃ৪৪)। কুরআনের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের প্রয়োজন না হলে আল্লাহ তা'আলা আপন নবীর প্রতি এ দায়িত্ব অর্পন করতেন না।


প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ও মুজতাহিদ ইমাম আওজাঈ (রহঃ) বলেন-"হাদীস কুরআনের তত মুখাপেক্ষী নয়, কুরআন হদীসের যত মুখাপেক্ষী"-(তা'লীকুচ্ছবীহ,খন্ড-১,পৃঃ৩)। অর্থাৎ কুরআনের মর্ম অনুধাবনের জন্যে হাদীসের সাহায্য নেয়া ব্যতীত গত্যন্তর নেই। আর এতে নিহত রয়েছে আল্লাহ তা'আলার অসংখ্য হিকমত ও রহস্য। 


হযরত নবী করীম (সাঃ)-এর বাণী ও কর্ম তথা তাঁর পবিত্র জীবনাদর্শ ব্যতীত কোন ব্যক্তির পক্ষে সত্যিকার মুসলমান হওয়া সম্ভব নয়। যেমন, তাওহীদের পর সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হল নামাজ। কুরআন মাজীদের স্হানে স্হানে নামাজের আদেশ রয়েছে, কিন্তু নামাজের নিয়ম- কানুনের বিবরণ কুরআনে পাওয়া যায় না। 


তাই নামাজের নিয়ম -কানুনের তা'লীম দান উদ্দেশ্যে হযরত নবী করীম (সা) বলেন-"তোমরা আমাকে যেরূপ নামায পড়তে দেখ, সেরূপ নামায পড়"। সুতরাং বুঝা যায়, চৌদ্দশ বছর পর্যন্ত নামাযের যে নিয়ম চলে আসছে, তা নবী করীম (সাঃ)-এর বাণী ও কর্ম দ্বারাই রূপায়িত হয়েছে। 


অনুরূপ যাকাত ও ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত এবং আর্থ-সামাজিক সমস্যা সমাধানে যাকাতের ভূমিকা অনস্বীকার্য্য। কুরআন মাজীদে এর অহরহ তাগিদ দেয়া হয়। কিন্তু নিছাবের কোন বিবরণ পাওয়া যায় না। ফিকাহশাস্ত্রের শ্রদ্ধেয় ইমামগণ সংশ্লিষ্ট হাদীস সমূহের আলোকে যাকাতের পূর্ণাঙ্গ নিয়ম কানুন রচনা করে দিয়েছেন।


মোট কথা, যে ইসলাম পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান রূপে স্বীকৃত, তা' হাদীস ও সুন্নাতে-রাসূল (সাঃ) ব্যতীত রাস্ট্র ও সমাজে এবং ব্যক্তিগত ও প্রাত্যহিক জীবনে প্রতিষ্ঠিত লাভ করতে পারে না। 


হাদীস ও সুন্নাত ব্যতীত কুরআন বুঝা বড় মুশকিল। যারা এ দুঃসাহস দেখায় তারা ভয়ংকর পথে পা বাড়ায়। ইমামে আজম আবু হানীফা (রহঃ) তাই বলেছেন- "হাদীস ও সুন্নাত না হলে আমাদের কেউ কুরআন বুঝত না"।-(মীজানে শা'রানী পৃঃ৫২)।


হাদীস অস্বীকার করে যারা কুরআনকেই শুধু দ্বীনের উৎস মনে করে, কুরআনের ঐ সমস্ত আয়াতকেও তাদের স্বীকার করতে হবে, যেখানে পরিষ্কার বলা হয়েছে যে, হাদীস ও সুন্নাত দ্বীনের উৎস এবং শরীয়তের স্বতন্ত্র দলীল। যদি স্বীকার না করে তবে তা হবে কুরআন অস্বীকার করার নামান্তর। 


কুরআনে একশতেরও অধিক আয়াত এমন আছে, যেগুলোর প্রত্যেকটি হাদীসের শরয়ী দলীল হওয়া বুঝায়। যেমন -সূরা জুমার দুই নম্বর আয়াতে নবী করীম (সাঃ) এর চারটি দায়িত্ব উল্লেখ করা হয়ঃ (১) তিলাওয়াতে কুরআন, (২) পরিশুদ্ধ করণ, (৩) কিতাবের তা'লীম এবং (৪) হিকমতের শিক্ষা দান। এখানে তা'লীম অর্থ কুরআনের তাফসীর ও ব্যাখ্যা দান, আর হিকমতের তা'লীম অর্থ হাদীস ও সুন্নাতের শিক্ষা দান।-(ইবনে কাসীর,খন্ড -১, পৃঃ১৮৪)।

সুতরাং বুঝা যায়, নবী করীম (সাঃ) এর দায়িত্ব ডাক পিয়নের মত শুধু মানুষের কাছে আল্লাহ তা'আলার বাণী পৌছানো নয়, বরং কুরআনের তা'লীম এবং তাফসীর ও ব্যাখ্যার দায়িত্বও তাঁর প্রতি ন্যস্ত হয়েছে। 


লেখকঃ খতীব আব্দুচ্ছালাম বাগেরহাটী, পিলখানা, ঢাকা। 









একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Post a Comment (0)

নবীনতর পূর্বতন