![]() |
মহানবী (সাঃ) কে জাগ্রত অবস্থায় (স্বপ্নে নয়) স্বশরীরে বুরাকের ওপর আরোহণ করিয়ে হযরত জিবরাঈল আলাইহিসসালাম মসজিদুল হারাম থেকে বাইতুল আকসা বা বাইতুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত ভ্রমণ করিয়েছিলেন। বাইতুল মুকাদ্দাসে অবতরণের পর সেখানে সমবেত নবীগণের (আঃ) জামা'আতে ইমামতি ও সালাত আদায় করেন।
সালাত আদায়ের সময় বুরাককে মসজিদের দরজার কড়ায় বেঁধে রাখা হয়েছিল। সালাত আদায়ের পর পুনরায় তাঁকে বুরাকে আরোহণ করিয়ে পৃথিবীর নিকটতম আসমানে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রথম আসমানের দরজা খোলা হলে সেখানে মানুষের আদি পিতা হযরত আদম (আঃ)-এর সঙ্গে মহানবী (সাঃ)-এর সাক্ষাৎ হয়।
হযরত জিবরাঈল (আঃ) তাঁর প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন যে, "ইনি হচ্ছেন আপনার আদি পিতা হযরত আদম (আঃ)। তাঁকে সালাম করুন। একথা শোনে মহানবী (সাঃ) তাঁকে শ্রদ্ধাভরে সালাম জানান। হযরত আদম (আঃ) আবেগ-আপ্লুত কন্ঠে সালামের জবাব দিয়ে বললেন- " খোশ আমদেদ! হে আমার বংশের মধ্যমণি! খোশ আমদেদ! হে আমার বংশের গৌরব"! অতপর তিনি তাঁর নবুওয়্যতের স্বীকারোক্তি করলেন এবং ডানদিকে আল্লাহ তা'আলার নেককার বান্দাগণের এবং বাম দিকে বদকার বান্দাগণের আত্মাসমূহ তাঁকে প্রদর্শন করালেন।
এর পর তাঁকে দ্বিতীয় আসমানে নিয়ে যাওয়া হয়। দরজা খোলা হলে সেখানে হযরত ইয়াহইয়া বিন জাকারিয়া এবং হযরত ঈসা বিন মরিয়ম (আঃ)-এর সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হয়। পরিচয় পর্বের পর তিনি তাঁদের শ্রদ্ধাভরে সালাম জানান। উভয়েই সালামের জবাব দিয়ে তাঁকে মোবারকবাদ ও উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান। তাঁরা তাঁর নবুওয়্যতের স্বীকারোক্তি করেন।
তৃতীয় পর্যায়ে তাঁকে তৃতীয় আসমানে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ইউসুফ (আঃ)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে তিনি তাঁকে শ্রদ্ধাভরে সালাম জানান। তিনিও সালামের জবাব দিয়ে তাঁকে মোবারকবাদ জানান এবং তাঁর নবুওয়্যতের স্বীকারোক্তি করেন।
তারপর তাঁকে চতুর্থ আসমানে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তিনি হযরত ইদ্রিস (আঃ) কে দেখেন। তাঁকে শ্রদ্ধাভরে সালাম জানান। তিনি সালামের জবাব দিয়ে তাঁকে মোবারকবাদ জানান এবং তাঁর নবুওয়্যতের স্বীকারোক্তি করেন।
পঞ্চম আসমানে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে তিনি হযরত হারুন বিন ইমরান (আঃ) কে দেখতে পান এবং তাঁকে শ্রদ্ধাভরে সালাম জানান। তিনি যথারীতি সালামের জবাব দিয়ে তাঁকে মোবারকবাদ জানান এবং তাঁর নবুওয়্যতের স্বীকারোক্তি জ্ঞাপন করেন।
অতপর মহানবী (সাঃ) কে ৬ষ্ঠ আসমানে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে হযরত মূসা বিন ইমরানের (আঃ) সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হয়। তিনি তাঁকে শ্রদ্ধাভরে সালাম জানিয়ে কুশলাদি বিনিময় করেন। হযরত মূসা (আঃ) শ্রদ্ধাসহ সালামের জবাব দিয়ে তাঁকে মোবারকবাদ জানান। তিনি তাঁর নবুওয়্যতের স্বীকারোক্তি জ্ঞাপন করেন।
অগ্রযাত্রার পরবর্তী পর্যায়ে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় সপ্তম আসমানে সপ্তম আসমানে তাঁর সাক্ষাৎ লাভ হয় হযরত ইব্রাহিম খলিলুল্লাহ (আঃ)-এর সঙ্গে। তিনি তাঁকে শ্রদ্ধাভরে সালাম ও মোবারকবাদ জ্ঞাপন করেন। তিনিও স্ব শ্রদ্ধ চিত্তে সালামের জবাব দিয়ে তাঁকে মোবারকবাদ জানান। তিনি তাঁর নবুওয়্যতের স্বীকৃতি জ্ঞাপন করেন।
হযরত ইব্রাহিম (আঃ)-এর সঙ্গে সাক্ষাতের পর তাঁর অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকে। তিনি গিয়ে উপস্থিত হন সিদরাতুল মুনতাহার নিকটে। এখানে জিবরাঈল (আঃ) যাত্রা বিরতি করলেন। জিবরাঈল (আঃ)-এর পক্ষে এগিয়ে যাওয়া আর সম্ভব হল না। কাজেই বুরাকের পিঠে বসা মহানবী (সাঃ) একাই চলতে থাকলেন সামনের পানে। চলার শেষ পর্যায়ে তিনি গিয়ে উপস্থিত হলেন 'বাইতুল মা'মুরের' নিকটে। এখানে মহানবী (সাঃ) -এর বাহন বুরাক থেমে গেল।
অতপর নবীকুল শিরোমণি, রহমাতুল্লিল আলামীন, খাতামুন্নাবিয়্যীন নীত হলেন অনাদি, অনন্ত, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লার একান্ত সান্নিধ্যে।
লেখকঃ খতীব, আব্দুচ্ছালাম বাগেরহাটী, পিলখানা, ঢাকা।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন