মৃত্যু ও নিদ্রাকালীন প্রাণ হরণের পার্থক্য

প্রাণীদের প্রাণ সর্বাবস্থায় ও সর্বক্ষণই আল্লাহ তা'আলার আয়ত্তাধীন। তিনি যখন ইচ্ছা তা হরণ করতে ও ফিরিয়ে নিতে পারেন। আল্লাহ তা'আলার এ কুদরত প্রত্যেক প্রাণীই প্রত্যহ দেখে ও অনুভব করে। নিদ্রার সময় তার প্রাণ আল্লাহ তা'আলার এক প্রকার করায়ত্তে চলে যায় এবং জাগ্রত হওয়ার পর ফিরে পায়। অবশেষে এমন এক সময় আসবে, যখন তা সম্পূর্ণ করায়ত্ত হয়ে যাবে এবং ফিরে পাওয়া যাবে না।



তাফসীরে মাযহারীতে আছে, প্রাণ হরণ করার অর্থ তার সম্পর্ক দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়া। কখনও বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ সবদিক দিয়ে বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়, এরই নাম মৃত্যু। আবার কখনও শুধু বাহ্যিকভাবে বিচ্ছিন্ন করা হয়। আভ্যন্তরীণভাবে যোগাযোগ থাকে। এর ফলে কেবল বাহ্যিকভাবে জীবনের লক্ষণ, চেতনা ও ইচ্ছাভিত্তিক নড়াচড়ার শক্তি বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয় এবং আভ্যন্তরীণ দিক দিয়ে দেহের সাথে প্রাণের সম্পর্ক বাকী থাকে। ফলে সে শ্বাস গ্রহণ করে ও জীবিত থাকে। 



এটা এভাবে করা হয় যে, মানুষের প্রাণকে 'আলমে মিছাল' অধ্যয়নের দিকে নিবিষ্ট করে এ জগৎ থেকে বিমুখ ও নিষ্ক্রিয় করে দেয়া হয়,  যাতে মানুষ পরিপূর্ণ আরাম লাভ করতে পারে। যখন আভ্যন্তরীণ সম্পর্কও বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়, তখন দেহে জীবন সম্পূর্ণরূপে খতম হয়ে যায়। 



আল্লাহ তা'আলা বলেন- আল্লাহ মানুষের প্রাণ হরণ করেন তার মৃত্যুর সময়, আর যে মরে না, তার নিদ্রাকালে। অতঃপর যার মৃত্যু অবধারিত করেন, তার প্রাণ ছাড়েন না এবং অন্যান্যদের ছেড়ে দেন এক নির্দিষ্ট সময়ের জন্যে। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল লোকদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে। (সূরা আল-যুমার-৩৯ঃ৪২)।



হযরত আলী (রাঃ) বলেন, 'নিদ্রার সময় মানুষের প্রাণ তার দেহ থেকে বের হয়ে যায়, কিন্তু প্রাণের একটি রেশ দেহে বাকী থাকে। ফলে মানুষ জীবিত থাকে। এ রেশের মাধ্যমেই সে স্বপ্ন দেখে। এ স্বপ্ন আলমে মিছালের দিকে প্রাণের নিবিষ্ট থাকা অবস্থায় দেখা হলে তা সত্য স্বপ্ন হয় এবং সেদিক থেকে দেহের দিকে ফিরে আসার সময় দেখলে তাতে শয়তানের কারসাজি শামিল হয়ে যায়। ফলে সেটা সত্য স্বপ্ন থাকে না।' 



তিনি আরও বলেন, 'নিদ্রাবস্হায় প্রাণ দেহ থেকে বেরিয়ে যায়; কিন্তু জাগরণের সময় এক নিমেষের চেয়েও কম সময়ে দেহে ফিরে আসে। 



লেখকঃ খতীব আব্দুচ্ছালাম বাগেরহাটী, পিলখানা, ঢাকা। 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Post a Comment (0)

নবীনতর পূর্বতন