#কাবলাল জুমআ চার রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদা..
মুসলিম উম্মাহর অধিকাংশ ইমামদের মতে জুমার পূর্বের সুন্নত হলো সুন্নতে মুআক্কাদা৷ ইমাম ইবনে রজব হাম্ভলি (রা.) ‘ফাতহুল বারী’তে এ মাসআলা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন৷
তিনি লিখেন, ইমামরা এ বিষয়ে মতানৈক্য করেছেন যে, জুমার পূর্ববর্তি সুন্নত জোহরের পূর্বের চার রাকাতের মত মুয়াক্কাদা, নাকি আছরের আগের সুন্নাতের মতো মুস্তাহাব? অধিকাংশ ইমামদের মত হলো, জুমার পূর্বের সুন্নত হলো সুন্নতে মুয়াক্কাদা।
ইমাম আওযায়ী, সুফিয়ান ছাওরি, ইমাম আবু হানিফা এবং তার ছাত্রদের কথা। ইমাম আহমদ (রা.) এর মতও হলো এমন। কাজী আবু ইয়ালা ‘শারহুল মুহাযযাব’ এ এবং ইবনূ আক্বিল বলেছেন, জুমার পূর্বের সুন্নত সুন্নতে মুয়াক্কাদা হওয়ার মত হলো ইমাম শাফেয়ী (র.) এর৷ (ফাতহুল বারী,৫/৫৪৪.দারু ইবনিল জাওযী)
উম্মাহর স্বীকৃত এতজন ইমাম জুমার পূর্বের সুন্নতকে সুন্নতে মুয়াক্কাদা বলে গেছেন! ইমামরা নসের (মূল টেক্সট) আলোকেই সুন্নতে মুয়াক্কাদা বলেছেন৷ এখানে হাদিস নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার সুযোগ কম, তবুও শুধু কয়েকটি হাদিস তুলে ধরছি৷
আবু আব্দুর রহমান সূলামী থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন: كان عبد الله يأمرنا أن نصلي قبل الجمعة أربعا وبعدها أربعا
অর্থাৎ আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (রা.) আমাদেরকে জুমার পূর্বে চার রাকাত এবং পরে চার রাকাত পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক: ৫৫২৫ ই’লাউস সুনান: ১৭৬২৷)
হাদিসটি সম্পর্কে হাফিজ ইবনে হাজার আসকালানী বলেন, رجاله ثقات
অর্থাৎ এ হাদিসের বর্ণনাকারীগণ হলেন বিশ্বস্ত এবং গ্রহণযোগ্য। (আদ দিরায়াহ: ১/১১৩)
হজরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমার পূর্বে চার রাকাত এবং পরে চার রাকাত সুন্নত পড়তেন। (আল মু’যামুল আওসাত: ১৬১৭, ই’লাউস সুনান: ১৭৬২)
এ হাদিসের একজন বর্ণনাকারী হলেন মুহাম্মাদ বিন আব্দুর রহমান আস সাহমী। তার সম্পর্কে ইমাম ইবনে আদী বলেন: আমার নিকট তার বর্ণনায় কোন অসুবিধা নেই।
এছাড়া ইমাম ইবনে হিব্বান (রা.) গ্রহণযোগ্য বর্ণনাকারীদের জীবনী সংক্রান্ত একটি গ্রন্থ রচনা করেছেন, যা ‘কিতাবুস ছিক্বাত’ নামে প্রসিদ্ধ। সেখানেও তিনি আব্দুর রহমান আস সাহমীর জীবনি উল্লেখ করেছেন। (লিসানুল মিযান: ৫/২৪৫)।
বাকী বর্ণনাকারী সকলেই হলেন “ছিক্বাহ”৷ এজন্যই মোল্লা আলী ক্বারী রাহি. বলেন, হাদিসটি জায়্যিদ তথা হাসান সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, যেমনটি ইমাম যাইনুদ্দীন ইরাকি (রা.) এর বক্তব্য যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমার পূর্বে চার রাকাত পড়েছেন৷ (মিরকাত: ২/১১২)
ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يركع قبل الجمعة أربعاً وبعدها أربعاً لا يفصل بينهن
অর্থাৎ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমার পূর্বে এবং পরে চার রাকাত সুন্নাত পড়েছেন। (আল মু’যামুল কাবীর: ১২৬৭৪৷ মাযমাউয যাওয়ায়িদ,৩১৯০)
ইবরাহীম নাখায়ী থেকে বর্ণিত: كانوا يصلون قبلها أربع
অর্থাৎ সাহাবায়ে কেরাম জুমার পূর্বে চার রাকাত পড়তেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা: ৫৪০৫)
এজন্য জুমার পূর্বের সুন্নাত একাধিক হাদিস দ্বারা প্রমাণিত৷ এটা নিয়ে সংশয়ের কোন সুযোগ নেই৷
⭕অধিকাংশ ইমামদের মতে জুমআর পুর্বের সুন্নত হলো সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। ইমাম ইবনে হাম্ভবল (রহঃ) ফাতহুল বারী "তে এ মাসআলা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।
وقد اختلف في الصلاة قبل الجمعة : هل هي من السنت الرو اتب كسنة الظهر ام هي مستحبه مر غب فيها كالصلاة قبل الجمعة ؟واكثر العلماء على انها سنة تبة منهم : الاوزاعي وابو حنيفة واصحبة: وهوظاهر كالام احمد ،وقد ذعره القاضي يعلى في " شرح المذهب ،وابن عقيل وهو المحيح عند اصحب اشافعي
⭕ইমামগণ এ বিষয়ে মতানৈক্য করেছেন যে, জুমার পুর্ববর্তি সুন্নত জোহরের পুর্বের ৪ রাকাতের মত মুয়াক্কাদা নাকি আছরের সুন্নাতের মতে মুস্তাহাব ❗
⭕অধিকাংশ ইমামদের মত হলো জুমার পুর্বের সুন্নাত হলো সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। এটি ইমাম আওযায়ী, সুফিয়ান ছাওরি,ইমাম আবু হানিফা এবং তার ছাত্রদের কথা। ইমাম আহমেদ (রহঃ) এর মত এরকম। কাজী আবু ইয়ালা শারহুল মুহাযযাব এবং ইবনু আক্বিল বলেছেন জুমার পুর্বের সুন্নাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। ইমাম শাফেয়ী (রহঃ) ( ফাতহুল বারী ৫/৫৪৪দারু ইবনিল জাওযী)
⭕আবু আব্দুর রহমান সুলামী থেকে বর্ণিত তিনি বলেছেন كان عبدالله يامرنا ان نصلي قبل الجمعة اربعا وبعدها اربعا আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (রাঃ) আমাদেরকে জুমার পুর্বের ৪ রাকাত এবং পরের ৪ রাত পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। (মুসান্নেফ আব্দুর রাজ্জাক ৫৫২৫ ই,লাউস সুনান ১৭৬২)
⭕উক্ত হাদীস সম্পর্কে হাফিজ ইবনে হাজার আসকালানী (রহঃ) বলেন رجاله ثقات অর্থাৎ উক্ত হাদীসের বর্ণনাকারীগণ হলেন বিশ্বস্ত এবং গ্রহণযোগ্য ( আদ দিরায়াহ ১/১১৩)
⭕ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত
كان رسول الله صلى الله عليه وسلم ير كع قبل الجمعة اربعا وبعدها اربعا لا يفصل بينهم
অর্থাৎ রাসুল (সাঃ) জুমার পুর্বে এবং পরে চার রাকাত সুন্নাত পড়তেন। (আল মুযামুল কাবীর ১২৬৭৪ মাযমাউয যাওয়ায়িদ ৩১৯০)
⭕عن ابي عبيدة ،عن عبد الله ابن مسعود قال:كان يصلي قبل الجمعة اربعا
আবু ওবায়দা আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন যে,আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) জুমার আগে চার রাকাত নামাজ পড়তেন (মুসান্নেফ ইবনে আবী শায়বা ৪/১১৪(৫৪০২)
⭕عن جبلة بن سحيم ،عن عبد الله عبن عمر انه كان يصلي قبل الجمعة اربعا
জাবাল ইবনে সুহাইম হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন তিনি জুমার আগে চার রাকাত নামাজ পড়তেন।
কাবলাল জুমআ'র দলিল
حدثنا محمد بن يحيى . حدثنا يزيد بن عبد الله . حدثنا بقية عن مبشر بن عبيد عن حجاج بن أرطاة عن عطية العوفي عن ابن عباس قال : – كان النبي صلى الله عليه و سلم يركع قبل الجمعة أربعا .) سنن ابن ماجه -ج 1 / ص 358)
অনুবাদ-ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন-রাসূল সা. জুমআর পূর্বে চার রাকাত নামায পড়তেন। (সুনানে ইবনে মাজা-১/৩৫৮,হাদিস নং-১১২৯)
حدثنا أبو بكر قال حدثنا بن فضيل عن خصيف عن أبي عبيدة عن عبد الله قال كان يصلي قبل الجمعة أربعا )مصنف ابن أبي شيبة – (ج 1 / ص 463)
অনুবাদ-আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত। রাসূল সা. জুমআর পূর্বে চার রাকাত নামায পড়তেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা-১/৪৬৩, হাদিস নং-৫৪০২)
وروي عن [ عبد الله ] بن مسعود أنه كان يصلي قبل الجمعة أربعا وبعدها أربعا (سنن الترمذى-رقم الحديث-523
অনুবাদ-আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত। নিশ্চয় রাসূল সা. জুমআর পূর্বে এবং পরে চার রাকাত নামায পড়তেন। (সুনানে তিরমিজী-হাদিস নং-৫২৩)
3959 – حدثنا علي بن سعيد الرازي قال نا سليمان بن عمر بن خالد الرقي قال نا عتاب بن بشير عن خصيف عن ابي عبيدة عن عبد الله عن النبي صلى الله عليه و سلم أنه كان يصلي قبل الجمعة اربعا وبعدها أربعا (المعجم الأوسط- رقم الحديث-3959
অনুবাদ-আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত-রাসূল সা. জুমআর পূর্বে এবং পরে চার রাকাত নামায পড়তেন। (আল মুজামুল আওসাত-হাদিস নং-৩৯৫৯)
حدثنا حفص عن الأعمش عن إبراهيم قال كانوا يصلون قبلها أربعا )مصنف ابن أبي شيبة – ج 1 / ص 463
অনুবাদ-ইবরাহীম নাখয়ী রহ. থেকে আ’মাশ বর্ণনা করেন যে, সবাই জুমআর পূর্বে চার রাকাত নামায আদায় করতেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা-১/৪৬৩, হাদিস নং-৫৪০৪)
عبد الرزاق عن معمر عن قتادة أن بن مسعود كان يصلي قبل الجمعة أربع ركعات وبعدها أربع ركعات قال أبو إسحاق وكان علي يصلي بعد الجمعة ست ركعات وبه يأخذ عبد الرزاق )مصنف عبد الرزاق – ج 3 / ص 247
ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত। তারা জুমআর পূর্বে এবং পরে চার রাকাত নামায পড়তেন। (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক-৩/২৪৭, হাদিস নং-৫৫২৪)
🔴 চার রাকাত কবলাল জুমার ১৬ টি সহীহ হাদীস
🔴
🍂হাদীস নং ১:—
حدثنا علي بن سعيد الرازي قال نا سليمان بن عمر بن خالد الرقي قال نا عتاب بن بشير عن خصيف عن ابي عبيدة عن عبد الله عن النبي صلى الله عليه و سلم أنه كان يصلي قبل الجمعة اربعا وبعدها أربعا
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.হতে বর্ণিত.রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমআর পূর্বে চার রাকাত ও পরে চার রাকাত পড়তেন। (আল মু’জামুল আওসাত হাদীস নং ৩৯৫৯)
🌻হাদীসটির স্তর: সহীহ,মারফু ৷ হাদীসটি সম্পর্কে দুইটা মিথ্যা অভিযোগ প্রচলিত আছে ৷
①হাদীসটির একজন রাবী আবু উবায়দা সম্পর্কে অভিযোগ রয়েছে যে, সে তার পিতা থেকে কিছুই শুনেননি,তাই এটা সনদবিচ্ছিন(ইবনে হাজার আসকালানী রহঃ বলেছেন) কিন্তু তার এই অভিযোগটা সত্য নয় ৷৷ কেননা,
হাফেজ যাহাবী রহ. আবু উবায়দা সম্পর্কে সিয়ার গ্রন্থে লিখেছেন, روى عن أبيه شيئا وأرسل عنه اشياء অর্থাৎ তিনি কিছু হাদীস সরাসরি তাঁর পিতা থেকে (শুনে) বর্ণনা করেছেন, আর অনেক হাদীস মুরসালরূপে বর্ণনা করেছেন। (৪খ, ৩৬৩পৃ)
ইমাম বুখারী রহ. সহীহ সনদে উল্লেখ করেছেন, أنه فيما سأل أباه عن بيض الحمام فقال صوم يوم অর্থাৎ তিনি তার পিতাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ইহরামরত ব্যক্তি যদি কবুতর জাতীয় পাখির ডিম ভেঙ্গে ফেলে তাকে কী ক্ষতিপূরণ আসবে? তিনি বললেন, একদিনের রোজা রাখতে হবে।—(আলকুনা ৪৪৭)
এসব থেকে প্রতীয়মান হয় যে, আবু উবায়দা তার পিতা থেকে কিছুই শোনেননি: কথাটি সঠিক নয়।
②দ্বিতীয় অভিযোগ হলোঃ শায়েখ আলবানী রহিঃ
আত্তাব ইবনে বশীর কে যঈফ রাবী বলেছেন ৷
অথচ,আত্তাব ইবনে বশীর বুখারী শরীফের রাবী। (দেখুন:- বুখারী হাদীস নং ৫৭১৮ , ৭৩৪৭ ইত্যাদি)
সুতরাং হাদীসটি সম্পর্কে উল্লেখিত একটা অভিযোগও সত্য নয় ৷৷ হাদীসটি সহীহ্ এবং মারফু ৷৷
(১৬নং হাদিসে আলী রাঃ থেকে প্রমাণিত মারফু হাদিস ও বিস্তারিত তাহকিক দেয়া আছে )
.
🍂হাদীস নং ২:—
عَبْدُ الرَّزَّاقِ، عَنِ الثَّوْرِيِّ، عَنْ عَطَاءِ بْنِ السَّائِبِ، عَنْ أَبِي عَبْدِ الرَّحْمَنِ السُّلَمِيِّ قَالَ: كَانَ عَبْدُ اللَّهِ يَأْمُرُنَا أَنْ نُصَلِّيَ قَبْلَ الْجُمُعَةِ أَرْبَعًا، وَبَعْدَهَا أَرْبَعًا، حَتَّى جَاءَنَا عَلِيٌّ فَأَمَرَنَا أَنْ نُصَلِّيَ بَعْدَهَا رَكْعَتَيْنِ ثُمَّ أَرْبَعًا
আবু আব্দুর রহমান আসসুলামী রহ. বলেন: আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. আমাদেরকে জুমআর আগে চার রাকাত এবং পরে চার রাকাত আদায় করার নির্দেশ দিতেন। আর হযরত আলী রা. এসে আমাদেরকে নির্দেশ দিলেন জুমআর পরে প্রথমে দুই রাকাত অতঃপর চার রাকাত পড়ার।
(মুসান্নাফে আব্দুর রযযাক: ৫৫২৫, তবারানী কাবীর: ৯৪৩৬)
🌻হাদীসটির স্তর: সহীহ, মাওকুফ। এ হাদীসের রাবীগণ সবাই-ই বুখারী/মুসলিমের রাবী। হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রহ. বলেন: وَأخرج عبد الرَّزَّاق عَن ابْن مَسْعُود أَنه كَانَ يَأْمر بذلك وَرُوَاته ثِقَات “ইমাম আব্দুর রযযাক রহ. ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি এটার (জুমআর পূর্বে চার রাকাত পড়ার) নির্দেশ দিতেন। এ হাদীসের রাবীগণ সবাই-ই নির্ভরযোগ্য”। (আদদিরায়াহ: জুমআ অধ্যায়)
.
🍂হাদীস নং ৩:—
حَدَّثَنَا أَحْمَدُ قَالَ: نا شَبَابٌ الْعُصْفُرِيُّ قَالَ: نا مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ السَّهْمِيُّ قَالَ: نا حُصَيْنُ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ السَّلَمِيُّ، عَنْ أَبِي إِسْحَاقَ، عَنْ عَاصِمِ بْنِ ضَمْرَةَ، عَنْ عَلِيٍّ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّي قَبْلَ الْجُمُعَةِ أَرْبَعًا، وَبَعْدَهَا أَرْبَعًا، يَجْعَلُ التَّسْلِيمَ فِي آخِرِهِنَّ رَكْعَةً»
হযরত আলী রা. বলেন: রসূলুল্লাহ স. জুমআর পূর্বে চার রাকাত এবং জুমআর পরে চার রাকাত আর শেষ রাকাতে সালাম ফিরাতেন। আবু ইসহাক থেকে এ হাদীসটি কেবল হুসাইন বর্ণনা করেছেন; আর হুসাইন থেকেও শুধু মুহাম্মাদ বিন আব্দুর রহমান বর্ণনা করেছেন।
তাবারানী, আল মুজামুল আওসাত, হাদীস নং ১৬১৭; আবু সাঈদ ইবনুল আরাবী, (মৃত্যু ৩৪০ হি.) আল মুজাম, হাদীস নং ৮৭৪।
🌻হাদীসটির স্তর: সহীহ লিগাইরিহী ৷ মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুর রহমান আসসাহমী এবং আছেম বিন যমরা ব্যতিত সবাই বুখারী-মুসলিমের রাবী ৷ মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুর রহমান আসসাহমী সম্পর্কে কেউ কেউ এতোটুকু বলেছেন, ليس بمشهور অর্থাৎ তিনি প্রসিদ্ধ নন। তবে,ইবনে আদী রহ. বলেন: عندي لا بأس به “তাঁর ব্যাপারে কোন আপত্তি নেই”। ইবনে হিব্বান তাঁর নাম নির্ভরযোগ্য রাবীদের তালিকা সম্বলিত ‘ছিকাত’ কিতাবে বর্ণনা করেছেন। (লিসানুল মীযান: রাবী নম্বর- ৭০৫০) আছেম বিন যমরা তাকে বলেছেন صدوق “সত্যনিষ্ঠ”। (তাকরীব: ৩৩৮৪)
এ হাদীস থেকেও প্রমাণিত হয় যে, রসূলুল্লাহ স. জুমআর পূর্বে চার রাকাত নামায পড়তেন।
.
🍂হাদীস নং ৪:—
حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ، أَخْبَرَنَا أَيُّوبُ، عَنْ نَافِعٍ، قَالَ كَانَ ابْنُ عُمَرَ يُطِيلُ الصَّلاَةَ قَبْلَ الْجُمُعَةِ وَيُصَلِّي بَعْدَهَا رَكْعَتَيْنِ فِي بَيْتِهِ وَيُحَدِّثُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم كَانَ يَفْعَلُ ذَلِكَ .
👉নাফি’ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
তিনি বলেন, আব্দুল্লাহ্ ইবনে ‘উমার (রাঃ) জুমু’আহর সালাতের পূর্বে দীর্ঘক্ষণ সালাত আদায় করতেন এবং বলতেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরূপ করেছেন।
সহীহ: বুখারী ও মুসলিম, তার থেকে মারফুভাবে।
সুনানে আবু দাউদ হাদিস নং ১১২৮
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
Source: আল হাদিস অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ, IRD
.
🍂হাদীস নং ৫:—
حَدَّثَنَا فَهْدٌ ، قَالَ : ثنا عَلِيُّ بْنُ مَعْبَدٍ ، قَالَ : ثنا عُبَيْدُ اللَّهِ ، عَنْ زَيْدٍ ، عَنْ جَبَلَةَ بْنِ سُحَيْمٍ عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا أَنَّهُ كَانَ يُصَلِّي قَبْلَ الْجُمُعَةِ أَرْبَعًا ، لَا يَفْصِلُ بَيْنَهُنَّ بِسَلَامٍ ، ثُمَّ بَعْدَ الْجُمُعَةِ رَكْعَتَيْنِ ، ثُمَّ أَرْبَعًا
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রা. থেকে বর্ণিত: তিনি জুমআর পূর্বে চার রাকাত পড়তেন। আর এ চার রাকাতের মাঝে কোন সালাম ফিরাতেন না। অতঃপর জুমআ শেষে দুই রাকাত এবং তারপরে চার রাকাত পড়তেন। (ত্বহাবী শরীফ: ১৯৬৫)
🌻হাদীসটির স্তর: সহীহ, মাওকুফ। আলী বিন মা’বাদ ও ফাহাদ ব্যতীত এ হাদীসের রাবীগণ সবাই-ই বুখারী-মুসলিমের রাবী। আর ফাহাদ বিন সুলাইমানের ব্যাপারে আবু সাঈদ বিন ইউনুছ বলেন: وكان ثقة ثبتا “তিনি ছিলেন নির্ভরযোগ্য, মজবুত”। (তারীখে দিমাশক লি ইবনিল আসাকির: রাবী নম্বর- ৫৬৩৫) আলী বিন মা’বাদ ثقه “নির্ভরযোগ্য”। (তাকরীব: ৫৩৮৮)
এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, হযরত আব্দুল্লাহ বিন উমার রা. জুমআর পূর্বে চার রাকাত নামায পড়তেন। আর সাহাবায়ে কিরাম যে আমলের অনুসরণ করে থাকেন তা অবশ্যই রসূলুল্লাহ স. থেকে শুনে বা তাঁকে করতে দেখে করে থাকেন।
.
🍂হাদীস নং ৬:-
হযরত ইবনে আব্বাস রা. সম্পর্কে বর্ণিত,
أنه كان يصلي يوم الجمعة في بيته أربع ركعات ، ثم يأتي المسجد فلا يصلي قبلها ولا بعدها
তিনি জুমআর দিন ঘরে চার রাকাত পড়তেন। এরপর মসজিদে আসতেন এবং জুমআর আগে ও পরে আর কোন নামায পড়তেন না।
মুহাদ্দিস হারব ইবনে ইসমাইল কিরমানী (মৃত্যু ২৮০ হি.) তাঁর কিতাবে সনদসহ এটি উদ্ধৃত করেছেন। ইমাম ইবনে রজব হাম্বলী কিরমানীর বরাতে তাঁর বুখারী শরীফের ভাষ্যগ্রন্থ ফাতহুল বারীতে প্রমাণ হিসেবে এটি উল্লেখ করেছেন। (ফাতহুল বারী,হাদীস নং ৯৩৭)
উল্লেখ্য যে, এ হাদীসে যে বলা হয়েছে, জুমআর আগে ও পরে আর কোন নামায পড়তেন না: তার মানে তিনি মসজিদে পড়তেন না,শুধু বাড়ীতেই পড়তেন ।
.
🍂হাদীস নং ৭:—
حَدَّثَنَا حَفْصٌ ، عَنِ الأَعْمَشِ ، عَنْ إِبْرَاهِيمَ ، قَالَ : كَانُوا يُصَلُّونَ قَبْلَهَا أَرْبَعًا.
👉হযরত ইবরাহীম নাখঈ রহ. বলেন: তাঁরা (সাহাবায়ে কিরাম) জুমআর পূর্বে চার রাকাত আদায় করতেন। (ইবনে আবী শাইবা: ৫৪০৫)
🌻হাদীসটির স্তর: সহীহ, মাকতু’। ইবরাহীম নাখঈ রহ. বর্ণিত এ আছারের রাবীগণ সবাই-ই বুখারী/মুসলিমের রাবী।
এ আছারে ‘তাঁরা’ শব্দটি দ্বারা সাহাবায়ে কিরামই উদ্দেশ্য। কারণ, ইবরাহীম নাখঈ মধ্যম বয়সের তাবিঈ। তাঁর জীবদ্দশায় সাহাবায়ে কিরামের ব্যাপক উপস্থিতি ছিলো। সে যুগে কোন আমলের দলীল দিতে গেলে সাহাবায়ে কিরামের আমলকেই পেশ করা হতো। সুতরাং হাদীসটির অর্থ হলো: সাহাবায়ে কিরাম জুমআর পূর্বে চার রাকাত নামায পড়তেন। আর ইবাদাত সংক্রান্ত বিষয়ে সাহাবায়ে কিরামের আমল বা মন্তব্য মারফু’ তথা রসূলুল্লাহ স.-এর আমল হিসেবে পরিগণিত।
.
🍂হাদীস নং ৮:—
الأثرم قال حدثنا منجاب بن الحارث قال أخبرنا خالد بن سعيد بن عمرو بن سعيد بن العاصي عن أبيه قال كنت أرى
كنت أرى أصحاب رسول الله صلى الله عليه وسلم فإذا زالت الشمس يوم الجمعة قاموا فصلوا أربعا
👉আমর ইবনে সাঈদ ইবনুল আস রহ. (মৃত্যু ৭০ হি.) বলেন:-
আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণকে দেখতাম, জুমআর দিন সূর্য ঢলে যাওয়ার পর তাঁরা দাঁড়িয়ে যেতেন, এবং চার রাকাত পড়তেন। ইবনে আব্দুল বার রহ. তামহীদ গ্রন্থে (حديث ثامن لزيد بن أسلم) আবূ বকর আল আছরাম রহ. (মৃত্যু ২৭০ হি.) এর বরাতে এটি সনদসহ উল্লেখ করেছেন। এর সনদ সহীহ। ইবনে রজব হাম্বলীও তার ফাতহুল বারী গ্রন্থে আছরামের বরাতে এটি উদ্ধৃত করেছেন।
(আত-তামহীদ, হাদীস নং ৯৩৭)
.
🍂 হাদিস নং ৯:—
ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﺍﺑْﻦُ ﺃَﺑِﻲ ﻋُﻤَﺮَ، ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﺳُﻔْﻴَﺎﻥُ، ﻋَﻦْ ﺳُﻬَﻴْﻞِ ﺑْﻦِ ﺃَﺑِﻲ ﺻَﺎﻟِﺢٍ، ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻴﻪِ، ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﻫُﺮَﻳْﺮَﺓَ، ﻗَﺎﻝَ ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ " ﻣَﻦْ ﻛَﺎﻥَ ﻣِﻨْﻜُﻢْ ﻣُﺼَﻠِّﻴًﺎ ﺑَﻌْﺪَ ﺍﻟْﺠُﻤُﻌَﺔِ ﻓَﻠْﻴُﺼَﻞِّ ﺃَﺭْﺑَﻌًﺎ " . ﻗَﺎﻝَ ﺃَﺑُﻮ ﻋِﻴﺴَﻰ ﻫَﺬَﺍ ﺣَﺪِﻳﺚٌ ﺣَﺴَﻦٌ ﺻَﺤِﻴﺢٌ . ﻭَﺍﻟْﻌَﻤَﻞُ ﻋَﻠَﻰ ﻫَﺬَﺍ ﻋِﻨْﺪَ ﺑَﻌْﺾِ ﺃَﻫْﻞِ ﺍﻟْﻌِﻠْﻢِ . ﻭَﺭُﻭِﻱَ ﻋَﻦْ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺑْﻦِ ﻣَﺴْﻌُﻮﺩٍ ﺃَﻧَّﻪُ ﻛَﺎﻥَ ﻳُﺼَﻠِّﻲ ﻗَﺒْﻞَ ﺍﻟْﺠُﻤُﻌَﺔِ ﺃَﺭْﺑَﻌًﺎ ﻭَﺑَﻌْﺪَﻫَﺎ ﺃَﺭْﺑَﻌًﺎ . ﻭَﻗَﺪْ ﺭُﻭِﻱَ ﻋَﻦْ ﻋَﻠِﻲِّ ﺑْﻦِ ﺃَﺑِﻲ ﻃَﺎﻟِﺐٍ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﺃَﻧَّﻪُ ﺃَﻣَﺮَ ﺃَﻥْ ﻳُﺼَﻠَّﻰ ﺑَﻌْﺪَ ﺍﻟْﺠُﻤُﻌَﺔِ ﺭَﻛْﻌَﺘَﻴْﻦِ ﺛُﻢَّ ﺃَﺭْﺑَﻌًﺎ ﻭَﺫَﻫَﺐَ ﺳُﻔْﻴَﺎﻥُ ﺍﻟﺜَّﻮْﺭِﻱُّ ﻭَﺍﺑْﻦُ ﺍﻟْﻤُﺒَﺎﺭَﻙِ ﺇِﻟَﻰ ﻗَﻮْﻝِ ﺍﺑْﻦِ ﻣَﺴْﻌُﻮﺩٍ ( ﺭَﻭَﺍﻩ ﺍﻟﺘِّﺮﻣٍﺬِﻯْ ﻓِﻰْ ﺑَﺎﺏِ ﻣَﺎ ﺟَﺎﺀَ ﻓِﻲ ﺍﻟﺼَّﻼَﺓِ ﻗَﺒْﻞَ ﺍﻟﺠُﻤُﻌَﺔِ ﻭَﺑَﻌْﺪَﻫَﺎ )
হযরত আবু হুরাইরা রা. বলেন: রসূলুল্লাহ স. ইরশাদ করেন: তোমাদের কেউ যদি জুমআর পরে নামায আদায় করতে চায় তাহলে সে যেন চার রাকাত আদায় করে। ইমাম তিরমিজী রহ. বলেন: এ হাদীসটি হাসান-সহীহ। অনেক আহলে ইলম এ হাদীস অনুযায়ী আমল গ্রহণ করেছেন। আর হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত আছে: তিনি জুমআর পূর্বে চার রাকাত এবং পরে চার রাকাত আদায় করতেন। হযরত আলী রা. থেকে বর্ণিত আছে: তিনি জুমআর পরে দুই রাকাত অতঃপর চার রাকাত পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। হযরত সুফিয়ান সাওরী ও আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক রহ. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.-এর মতের অনুসরণ করেছেন। (তিরমিজী: ৫২৩)
.
🌻হাদীসটির স্তর: সহীহ। ইমাম তিরমিজী রহ. বলেন: এ হাদীসটি হাসান-সহীহ। শাব্দিক কিছু তারতম্যসহ এ হাদীসটি মুসলিম এবং আবু দাউদ শরীফেও বর্ণিত হয়েছে। (জামিউল উসূল: ৪১২৪)
.
🍁সারসংক্ষেপ : ইমাম তিরমিজী রহ.-এর দেয়া তথ্য থেকে জানা গেলো যে, হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রা. জুমআর পূর্বে চার রাকাত নামায পড়তেন। আরও জানা গেলো যে, হযরত সুফিয়ান সাওরী এবং আব্দুল্লাহ বিন মুবারক রহ. হযরত ইবনে মাসউদের আমল অনুযায়ী আমল করতেন।
.
🍂 হাদিস নং ১০:—
ﻋَﺒْﺪُ ﺍﻟﺮَّﺯَّﺍﻕِ، ﻋَﻦِ ﺍﻟﺜَّﻮْﺭِﻱِّ، ﻋَﻦْ ﻋَﻄَﺎﺀِ ﺑْﻦِ ﺍﻟﺴَّﺎﺋِﺐِ، ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﺮَّﺣْﻤَﻦِ ﺍﻟﺴُّﻠَﻤِﻲِّ ﻗَﺎﻝَ : ﻛَﺎﻥَ ﻋَﺒْﺪُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻳَﺄْﻣُﺮُﻧَﺎ ﺃَﻥْ ﻧُﺼَﻠِّﻲَ ﻗَﺒْﻞَ ﺍﻟْﺠُﻤُﻌَﺔِ ﺃَﺭْﺑَﻌًﺎ، ﻭَﺑَﻌْﺪَﻫَﺎ ﺃَﺭْﺑَﻌًﺎ، ﺣَﺘَّﻰ ﺟَﺎﺀَﻧَﺎ ﻋَﻠِﻲٌّ ﻓَﺄَﻣَﺮَﻧَﺎ ﺃَﻥْ ﻧُﺼَﻠِّﻲَ ﺑَﻌْﺪَﻫَﺎ ﺭَﻛْﻌَﺘَﻴْﻦِ ﺛُﻢَّ ﺃَﺭْﺑَﻌًﺎ
আবু আব্দুর রহমান আসসুলামী রহ. বলেন: আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. আমাদেরকে জুমআর আগে চার রাকাত এবং পরে চার রাকাত আদায় করার নির্দেশ দিতেন। আর হযরত আলী রা. এসে আমাদেরকে নির্দেশ দিলেন জুমআর পরে প্রথমে দুই রাকাত অতঃপর চার রাকাত পড়ার। (আব্দুর রযযাক: ৫৫২৫, তবারানী কাবীর: ৯৪৩৬)
🌻হাদীসটির স্তর: সহীহ, মাওকুফ। এ হাদীসের রাবীগণ সবাই-ই বুখারী/মুসলিমের রাবী।
হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রহ. বলেন:
.
ﻭَﺃﺧﺮﺝ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﺮَّﺯَّﺍﻕ ﻋَﻦ ﺍﺑْﻦ ﻣَﺴْﻌُﻮﺩ ﺃَﻧﻪ ﻛَﺎﻥَ ﻳَﺄْﻣﺮ ﺑﺬﻟﻚ ﻭَﺭُﻭَﺍﺗﻪ ﺛِﻘَﺎﺕ
“ইমাম আব্দুর রযযাক রহ. ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি এটার (জুমআর পূর্বে চার রাকাত পড়ার) নির্দেশ দিতেন। এ হাদীসের রাবীগণ সবাই-ই নির্ভরযোগ্য”। (আদদিরায়াহ: জুমআ অধ্যায়)
🍁সারসংক্ষেপ : এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রা. জুমআর পূর্বে চার রাকাত নামায পড়তেন। আর সাহাবায়ে কিরাম যে আমলের অনুসরণ করে থাকেন তা অবশ্যই রসূলুল্লাহ স. থেকে শুনে বা তাঁকে করতে দেখে করে থাকেন। এ কারণে মুহাদ্দিসীনে কিরাম ইবাদাত সংক্রান্ত বিষয়ে সাহাবায়ে কিরামের আমল বা মন্তব্যকে মারফু’ তথা রসূলুল্লাহ স.-এর আমল বা মন্তব্য হিসেবে মেনে নিয়েছেন।
.
🍂 হাদিস নং ১১:—
ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﻓَﻬْﺪٌ ، ﻗَﺎﻝَ : ﺛﻨﺎ ﻋَﻠِﻲُّ ﺑْﻦُ ﻣَﻌْﺒَﺪٍ ، ﻗَﺎﻝَ : ﺛﻨﺎ ﻋُﺒَﻴْﺪُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ، ﻋَﻦْ ﺯَﻳْﺪٍ ، ﻋَﻦْ ﺟَﺒَﻠَﺔَ ﺑْﻦِ ﺳُﺤَﻴْﻢٍ ﻋَﻦْ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺑْﻦِ ﻋُﻤَﺮَ ﺭَﺿِﻲَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻨْﻬُﻤَﺎ ﺃَﻧَّﻪُ ﻛَﺎﻥَ ﻳُﺼَﻠِّﻲ ﻗَﺒْﻞَ ﺍﻟْﺠُﻤُﻌَﺔِ ﺃَﺭْﺑَﻌًﺎ ، ﻟَﺎ ﻳَﻔْﺼِﻞُ ﺑَﻴْﻨَﻬُﻦَّ ﺑِﺴَﻠَﺎﻡٍ ، ﺛُﻢَّ ﺑَﻌْﺪَ ﺍﻟْﺠُﻤُﻌَﺔِ ﺭَﻛْﻌَﺘَﻴْﻦِ ، ﺛُﻢَّ ﺃَﺭْﺑَﻌًﺎ
হযরত আব্দুল্লাহ বিন উমার রা. থেকে বর্ণিত: তিনি জুমআর পূর্বে চার রাকাত পড়তেন। আর এ চার রাকাতের মাঝে কোন সালাম ফিরাতেন না। অতঃপর জুমআ শেষে দুই রাকাত এবং তারপরে চার রাকাত পড়তেন। (ত্বহাবী শরীফ: ১৯৬৫)
.
🌻হাদীসটির স্তর: সহীহ, মাওকুফ। আলী বিন মা’বাদ ও ফাহাদ ব্যতীত এ হাদীসের রাবীগণ সবাই-ই বুখারী-মুসলিমের রাবী। আর ফাহাদ বিন সুলাইমানের ব্যাপারে আবু সাঈদ বিন ইউনুছ বলেন: ﻭﻛﺎﻥ ﺛﻘﺔ ﺛﺒﺘﺎ “তিনি ছিলেন নির্ভরযোগ্য, মজবুত”। (তারীখে দিমাশক লি ইবনিল আসাকির: রাবী নম্বর- ৫৬৩৫) আলী বিন মা’বাদ ﺛﻘﻪ “নির্ভরযোগ্য”। (তাকরীব: ৫৩৮৮)
🍁সারসংক্ষেপ : এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, হযরত আব্দুল্লাহ বিন উমার রা. জুমআর পূর্বে চার রাকাত নামায পড়তেন। আর সাহাবায়ে কিরাম যে আমলের অনুসরণ করে থাকেন তা অবশ্যই রসূলুল্লাহ স. থেকে শুনে বা তাঁকে করতে দেখে করে থাকেন। এ কারণে মুহাদ্দিসীনে কিরাম ইবাদাত সংক্রান্ত বিষয়ে সাহাবায়ে কিরামের আমল বা মন্তব্যকে মারফু’ তথা রসূলুল্লাহ স.-এর আমল বা মন্তব্য হিসেবে মেনে নিয়েছেন।
.
🍂 হাদিস নং ১২:—
ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﺣَﻔْﺺٌ ، ﻋَﻦِ ﺍﻷَﻋْﻤَﺶِ ، ﻋَﻦْ ﺇِﺑْﺮَﺍﻫِﻴﻢَ ، ﻗَﺎﻝَ : ﻛَﺎﻧُﻮﺍ ﻳُﺼَﻠُّﻮﻥَ ﻗَﺒْﻠَﻬَﺎ ﺃَﺭْﺑَﻌًﺎ .
হযরত ইবরাহীম নাখঈ রহ. বলেন: তাঁরা (সাহাবায়ে কিরাম) জুমআর পূর্বে চার রাকাত আদায় করতেন। (ইবনে আবী শাইবা: ৫৪০৫)
🌻হাদীসটির স্তর: সহীহ, মাকতু’। ইবরাহীম নাখঈ রহ. বর্ণিত এ আছারের রাবীগণ সবাই-ই বুখারী/
মুসলিমের রাবী।
🍁সারসংক্ষেপ : এ আছারে ‘তাঁরা’ শব্দটি দ্বারা সাহাবায়ে কিরামই উদ্দেশ্য। কারণ, ইবরাহীম নাখঈ মধ্যম বয়সের তাবিঈ। তাঁর জীবদ্দশায় সাহাবায়ে কিরামের ব্যাপক উপস্থিতি ছিলো। সে যুগে কোন আমলের দলীল দিতে গেলে সাহাবায়ে কিরামের আমলকেই পেশ করা হতো। সুতরাং হাদীসটির অর্থ হলো: সাহাবায়ে কিরাম জুমআর পূর্বে চার রাকাত নামায পড়তেন। আর ইবাদাত সংক্রান্ত বিষয়ে সাহাবায়ে কিরামের আমল বা মন্তব্য মারফু’ তথা রসূলুল্লাহ স.-এর আমল হিসেবে পরিগণিত।
.
🍂 হাদিস নং ১৩:—
ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﺃَﺣْﻤَﺪُ ﻗَﺎﻝَ : ﻧﺎ ﺷَﺒَﺎﺏٌ ﺍﻟْﻌُﺼْﻔُﺮِﻱُّ ﻗَﺎﻝَ : ﻧﺎ ﻣُﺤَﻤَّﺪُ ﺑْﻦُ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﺮَّﺣْﻤَﻦِ ﺍﻟﺴَّﻬْﻤِﻲُّ ﻗَﺎﻝَ : ﻧﺎ ﺣُﺼَﻴْﻦُ ﺑْﻦُ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﺮَّﺣْﻤَﻦِ ﺍﻟﺴَّﻠَﻤِﻲُّ، ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﺇِﺳْﺤَﺎﻕَ، ﻋَﻦْ ﻋَﺎﺻِﻢِ ﺑْﻦِ ﺿَﻤْﺮَﺓَ، ﻋَﻦْ ﻋَﻠِﻲٍّ ﻗَﺎﻝَ : ﻛَﺎﻥَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻳُﺼَﻠِّﻲ ﻗَﺒْﻞَ ﺍﻟْﺠُﻤُﻌَﺔِ ﺃَﺭْﺑَﻌًﺎ، ﻭَﺑَﻌْﺪَﻫَﺎ ﺃَﺭْﺑَﻌًﺎ، ﻳَﺠْﻌَﻞُ ﺍﻟﺘَّﺴْﻠِﻴﻢَ ﻓِﻲ ﺁﺧِﺮِﻫِﻦَّ ﺭَﻛْﻌَﺔً » ﻟَﻢْ ﻳَﺮْﻭِ ﻫَﺬَﺍ ﺍﻟْﺤَﺪِﻳﺚَ ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﺇِﺳْﺤَﺎﻕَ ﺇِﻟَّﺎ ﺣُﺼَﻴْﻦٌ، ﻭَﻟَﺎ ﺭَﻭَﺍﻩُ ﻋَﻦْ ﺣُﺼَﻴْﻦٍ ﺇِﻟَّﺎ ﻣُﺤَﻤَّﺪُ ﺑْﻦُ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﺮَّﺣْﻤَﻦِ ﺍﻟﺴَّﻬْﻤِﻲُّ "
হযরত আলী রা. বলেন: রসূলুল্লাহ স. জুমআর পূর্বে চার রাকাত এবং জুমআর পরে চার রাকাত আর শেষ রাকাতে সালাম ফিরাতেন। আবু ইসহাক থেকে এ হাদীসটি কেবল হুসাইন বর্ণনা করেছেন; আর হুসাইন থেকেও শুধু মুহাম্মাদ বিন আব্দুর রহমান বর্ণনা করেছেন। (মু’জামে তবারানী আওসাত: ১৬১৭)
🌻হাদিসটির স্তর: হাসান। আহমাদ বিন হুসাইন, মুহাম্মাদ বিন আব্দুর রহমান ও আছেম বিন যমরা ব্যতীত এ হাদীসের রাবীগণ সবাই-ই বুখারী/মুসলিমের রাবী। আর আহমাদ বিন হুসাইনের ব্যাপারে ইমাম জাহাবী রহ. বলেন: ﻭﺛّﻘﻪ ﺍﻟﺪّﺍﺭَﻗُﻄْﻨﻲّ “ইমাম দারাকুতনী রহ. তাকে নির্ভরযোগ্য বলেছেন”। (তারীখে ইসলাম: ৬/৮৭৭)
মুহাম্মাদ বিন আব্দুর রহমানকে কেউ কেউ জঈফ বলেছেন। তবে ইবনে আদী রহ. বলেন: ﻋﻨﺪﻱ ﻻ ﺑﺄﺱ ﺑﻪ “তাঁর ব্যাপারে কোন আপত্তি নেই”। ইবনে হিব্বান তাঁর নাম নির্ভরযোগ্য রাবীদের তালিকা সম্বলিত ‘ছিকাত’ কিতাবে বর্ণনা করেছেন। (লিসানুল মীযান: রাবী নম্বর- ৭০৫০) আছেম বিন যমরা ﺻﺪﻭﻕ “সত্যনিষ্ঠ”। (তাকরীব: ৩৩৮৪)
🍁সারসংক্ষেপ : এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, রসূলুল্লাহ স. জুমআর পূর্বে চার রাকাত নামায পড়তেন। এ হাদীসটি যদিও সনদের দিক থেকে ততটা মজবুত নয়; কিন্তু সহীহ সনদে বর্ণিত সাহাবায়ে কিরামের আমল থেকে প্রমাণিত হয় যে, অবশ্যই রসূলুল্লাহ স. থেকে তাঁরা এটা দেখেছেন বা শুনেছেন।
.
🍂 হাদিস নং ১৪:—
ﺃﺧﺒﺮﻧﺎ ﻳﺰﻳﺪ ﺑﻦ ﻫﺎﺭﻭﻥ ﻋَﻦْ ﺣَﻤَّﺎﺩِ ﺑْﻦِ ﺳَﻠَﻤَﺔَ ﻋَﻦْ ﺻَﺎﻓِﻴَﺔَ ﺳَﻤِﻌَﻬَﺎ ﻭَﻫِﻲَ ﺗَﻘُﻮﻝُ : ﺭَﺃَﻳْﺖُ ﺻَﻔِﻴَّﺔَ ﺑِﻨْﺖَ ﺣُﻴَﻲٍّ ﺻَﻠَّﺖْ ﺃَﺭْﺑَﻌًﺎ ﻗَﺒْﻞَ ﺧُﺮُﻭﺝِ ﺍﻹِﻣَﺎﻡِ ﻭَﺻَﻠَّﺖِ ﺍﻟْﺠُﻤُﻌَﺔَ ﻣَﻊَ ﺍﻹِﻣَﺎﻡِ ﺭَﻛْﻌَﺘَﻴْﻦِ .
ছফিয়াহ রহ. বলেন: আমি উম্মুল মুমিনীন হযরত ছফিয়া রা.কে দেখেছি তিনি ইমাম মসজিদে আসার পূর্বে চার রাকাত নামায পড়তেন; অতঃপর ইমামের সাথে জুমআর নামায আদায় করতেন। (তবাকাতে ইবনে সা’দ: রাবী নম্বর- ৪৭০১)
🌻হাদীসটির স্তর: মাকবুল। তবকাতের বরাত দিয়ে এ হাদীসটি হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রহ. ‘আদদিরায়াহ’ কিতাবে এবং ইমাম যাইলাঈ ‘নাসবুর রায়াহ’ কিতাবে বর্ণনা করেছেন। তবে কেউই এ হাদীসের সনদের ওপর কোন আপত্তি করেননি; বরং উভয় ইমামই এটাকে দলীল হিসেবে বর্র্ণনা করেছেন। সুতরাং হাদীসটি দলীলযোগ্য।
🍁সারসংক্ষেপ : উপরোক্ত মারফু’, মাউকুফ ও মাকতু’ হাদীস দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, জুমআর পূর্বে চার রাকাত নামায সুন্নাত এবং রসূলুল্লাহ স., সাহাবায়ে কিরাম ও তাবিঈগণসহ সর্বস্তরের উলামায়ে কিরাম এর ওপর আমল করতেন।
এমনকি জুমআর দিন খুতবার পূর্বে আরও অধিক রাকাত নামায পড়ার প্রতি রসূলুল্লাহ স. উৎসাহ দিয়েছেন এবং সাহাবায়ে কিরাম আমলও করেছেন। নমুনা হিসেবে দু’একটি হাদীস নিন্মে পেশ করা হচ্ছে।
.
🍂 হাদিস নং ১৫:—
ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﻋَﺒْﺪَﺍﻥُ ﻗَﺎﻝَ ﺃَﺧْﺒَﺮَﻧَﺎ ﻋَﺒْﺪُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻗَﺎﻝَ ﺃَﺧْﺒَﺮَﻧَﺎ ﺍﺑْﻦُ ﺃَﺑِﻲ ﺫِﺋْﺐٍ ﻋَﻦْ ﺳَﻌِﻴﺪٍ ﺍﻟْﻤَﻘْﺒُﺮِﻱِّ ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻴﻪِ ﻋَﻦْ ﺍﺑْﻦِ ﻭَﺩِﻳﻌَﺔَ ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﺳَﻠْﻤَﺎﻥُ ﺍﻟْﻔَﺎﺭِﺳِﻲُّ ﻗَﺎﻝَ ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻣَﻦْ ﺍﻏْﺘَﺴَﻞَ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟْﺠُﻤُﻌَﺔِ ﻭَﺗَﻄَﻬَّﺮَ ﺑِﻤَﺎ ﺍﺳْﺘَﻄَﺎﻉَ ﻣِﻦْ ﻃُﻬْﺮٍ ﺛُﻢَّ ﺍﺩَّﻫَﻦَ ﺃَﻭْ ﻣَﺲَّ ﻣِﻦْ ﻃِﻴﺐٍ ﺛُﻢَّ ﺭَﺍﺡَ ﻓَﻠَﻢْ ﻳُﻔَﺮِّﻕْ ﺑَﻴْﻦَ ﺍﺛْﻨَﻴْﻦِ ﻓَﺼَﻠَّﻰ ﻣَﺎ ﻛُﺘِﺐَ ﻟَﻪُ ﺛُﻢَّ ﺇِﺫَﺍ ﺧَﺮَﺝَ ﺍﻟْﺈِﻣَﺎﻡُ ﺃَﻧْﺼَﺖَ ﻏُﻔِﺮَ ﻟَﻪُ ﻣَﺎ ﺑَﻴْﻨَﻪُ ﻭَﺑَﻴْﻦَ ﺍﻟْﺠُﻤُﻌَﺔِ ﺍﻟْﺄُﺧْﺮَﻯ ( ﺭَﻭَﺍﻩ ﺍﻟْﺒُﺨَﺎﺭِﻯُّ ﻓِﻰْ ﺑَﺎﺏِ ﻻَ ﻳُﻔَﺮِّﻕُ ﺑَﻴْﻦَ ﺍﺛْﻨَﻴْﻦِ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟﺠُﻤُﻌَﺔِ )
হযরত সালমান ফারসী রা. বলেন: রসূলুল্লাহ স. ইরশাদ করেন: যে ব্যক্তি জুমআর দিনে গোসল করে এবং যথাসম্ভব পবিত্রতা অর্জন করে; অতঃপর তেল মেখে অথবা সুগন্ধি ব্যবহার করে মসজিদে যায়। আর দু’জনের মধ্যে ফাঁক সৃষ্টি করে না এবং তার ভাগ্যে যা লেখা আছে সে পরিমাণ নামায আদায় করে। অতঃপর ইমাম বের হয়ে এলে চুপ থাকে। তার এ জুমআ থেকে পরবর্তী জুমআ পর্যন্ত মধ্যবর্তী গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়। (বুখারী: ৮৬৪, পৃষ্ঠা: ১/১২৪)
🌻হাদিসটির স্তর: সহীহ। শাব্দিক কিছু তারতম্যসহ এ হাদীসটি নাসাঈ শরীফেও বর্ণিত হয়েছে। (জামিউল উসূল: ৭১০৩)
🍁সারসংক্ষেপ : এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, হযরত সালমান ফারসী রা. জুমআর পূর্বে যথাসাধ্য অধিক নামায পড়তেন।
.
ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﻋَﻔَّﺎﻥُ، ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﻭُﻫَﻴْﺐٌ، ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﺃَﻳُّﻮﺏُ، ﻋَﻦْ ﻧَﺎﻓِﻊٍ، ﺃَﻥَّ ﺍﺑْﻦَ ﻋُﻤَﺮَ ﻛَﺎﻥَ ﻳَﻐْﺪُﻭ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟْﻤَﺴْﺠِﺪِ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟْﺠُﻤُﻌَﺔِ، ﻓَﻴُﺼَﻠِّﻲ ﺭَﻛَﻌَﺎﺕٍ ﻳُﻄِﻴﻞُ ﻓِﻴﻬِﻦَّ ﺍﻟْﻘِﻴَﺎﻡَ، ﻓَﺈِﺫَﺍ ﺍﻧْﺼَﺮَﻑَ ﺍﻟْﺈِﻣَﺎﻡُ ﺭَﺟَﻊَ ﺇِﻟَﻰ ﺑَﻴْﺘِﻪِ ﻓَﺼَﻠَّﻰ ﺭَﻛْﻌَﺘَﻴْﻦِ " ، ﻭَﻗَﺎﻝَ : ﻫَﻜَﺬَﺍ ﻛَﺎﻥَ ﻳَﻔْﻌَﻞُ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ "
হযরত নাফে’ রহ. বলেন: হযরত ইবনে উমার রা. জুমআর দিন ওয়াক্তের শুরুতেই মসজিদে আগমন করতেন। অতঃপর দীর্ঘ কিয়ামে বেশ কিছু রাকাত নামায আদায় করতেন। জুমআর পরে ইমাম ফিরে গেলে তিনিও বাড়ীতে ফিরে গিয়ে দু’রাকাত নামায পড়তেন। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ স.ও এভাবে (বাড়ীতে গিয়ে দু’রাকাত) আদায় করতেন। (মুসনাদে আহমাদ-৫৮০৭, ইবনে আবী শাইবা: ৫৪০৩).
🌻হাদীসটির_স্তর : সহীহ। হযরত ইবনে উমার রা. বর্ণিত এ হাদীসের রাবীগণ সকলেই বুখারী-মুসলিমের রাবী। শায়খ শুআইব আরনাউত বলেন, ﺇﺳﻨﺎﺩﻩ ﺻﺤﻴﺢ ﻋﻠﻰ ﺷﺮﻁ ﺍﻟﺸﻴﺨﻴﻦ হাদীসটির সনদ বুখারী-মুসলিমের শর্তে সহীহ। (মুসনাদে আহমাদ-৫৮০৭ নং হাদীসের আলোচনায়)
🍁 সারসংক্ষেপঃ এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, হযরত ইবনে উমর রা. জুমআর পূর্বে যথাসাধ্য অধিক নামায পড়তেন। যা চার রাকাতের কম নয়। কারণ হাদীসে ব্যবহৃত ﺭَﻛَﻌَﺎﺕٍ শব্দটি বহুবচন। আর আরবী ভাষায় এর পরিমান কমপক্ষে তিন। কিন্তু জুমআর পূর্বে তিন রাকাত নফলের যেহেতু কোন অস্তিত্ব নেই।
.
.
🍂🍂 হাদিস নং ১৬:—
ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﺇﺳﺤﺎﻕ، ﻋﻦ ﻋﺎﺻﻢ ﺑﻨﻀَﻤْﺮﺓ، ﻋﻦ ﻋﻠﻲ ﻗﺎﻝ : ﻛﺎﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻳﺼﻠﻲ ﻗﺒﻞ ﺍﻟﺠﻤﻌﺔ ﺃﺭﺑﻌﺎ،
আবু ইসহাক আস সাবীয়ী আসিম ইবনে দমরা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি আলী রা. থেকে, যে, ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমার আগে চার রাকাত পড়তেন।’ (আল-ফাওয়াইদ, আবুল হাসান আল খিলায়ী-তরহুত তাছরীব খ ৩, পৃ. ৩৬)
🌻 হাদিসটির স্তরঃ একাধিক হাদীসবিশারদ ‘‘আল ফাওয়াইদ’’-এর উদ্ধৃতিতে এ হাদীস বর্ণনা করেছেন এবং সনদ নির্ভরযোগ্য বলেছেন। যেমন :
.
ক. হাফিয যাইনুদ্দীন ইরাকী (৮০৬ হি.) (দ্র. ফয়যুল কাদীর)
.
খ. হাফিয আবু যুরআ ইরাকী (৮২৬ হি.) (দ্র. তরহুত তাছরীব ৩/৩৬)
.
গ. হাফিয শিহাবুদ্দীন আল বূসীরী (৮৪০ হি.) (দ্র. মিসবাহুয যুজাজাহ ফী যাওয়াইদি ইবনে মাজাহ খ. ১, পৃ. ১৩৬)
.
ঘ. মুহাদ্দিস আব্দুর রউফ আল
মুনাভী (১০৩১ হি.) (দ্র. ফয়জুল কাদীর খ. ৫ পৃ. ২১৬)
.
ঙ. মুহাদ্দিস মুরতাজা যাবিদী (১২০৫ হি.) (দ্র. ইতহাফুস সাদাতিল মুত্তাকীন ফি শরহি ইহইয়াই উলূমিদ্দীন খ. ৩, পৃ. ২৭৫)
👇
সনদের শেষ অংশ তো তাঁরা উল্লেখ করেই দিয়েছেন, যা কমসে কম ‘হাসান’ পর্যায়ের। আর আবুল হাসান আল খিলায়ী থেকে আবু ইসহাক আস সাবীয়ী পর্যন্ত সনদের যে অংশ তা উল্লেখ না করলেও তাঁরা একবাক্যে বলেছেন, তা ‘জাইয়েদ সনদ’ যার শাব্দিক অর্থ উত্তম সনদ। আর উসূলে হাদীসের পরিভাষায় ‘জাইয়েদ সনদ’ কে ‘হাসান’-এর উপরে গণ্য করা হয়। (তাদরীবুর রাবী খ. ১ পৃ. ১৭৮)
.
আবুল হাসান আল খিলায়ীর সনদের সমর্থন ঐ রেওয়ায়েত দ্বারাও হয়, যা তবারানী ‘‘আলমুজামুল আওসাত’’ কিতাবে এবং আবু সায়ীদ ইবনুল আরাবী তাঁর ‘‘আলমু’জাম’’ কিতাবে বর্ণনা করেছেন। বর্ণনাটি এই-
.
ﻣﺤﻤﺪ ﺑﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﺍﻟﺴَّﻬْﻤﻲ، ﺣﺪﺛﻨﺎ ﺣُﺼَﻴْﻦ ﺑﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﺍﻟﺴُّﻠَﻤِﻲ، ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﺇﺳﺤﺎﻕ، ﻋﻦ ﻋﺎﺻﻢ ﺑﻨﻀَﻤْﺮﺓ، ﻋﻦ ﻋﻠﻲ ﻗﺎﻝ : ﻛﺎﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻳﺼﻠﻲ ﻗﺒﻞ ﺍﻟﺠﻤﻌﺔ ﺃﺭﺑﻌﺎ، ﻭﺑﻌﺪﻫﺎ ﺃﺭﺑﻌﺎ، ﻳﺠﻌﻼﻟﺘﺴﻠﻴﻢَ ﻓﻲ ﺁﺧﺮﻫﻦ .
মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুর রহমান আসসাহমী বর্ণনা করেন, আমাদেরকে হুসাইন ইবনে আব্দুর রহমান আসসুলামী বর্ণনা করেছেন, তিনি আবু ইসহাক (সাবীয়ী) থেকে, তিনি আসিম ইবনে দমরা থেকে, তিনি আলী রা. থেকে, যে ‘‘আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমার আগে চার রাকাত এবং জুমার পরে চার রাকাত পড়তেন এবং সর্বশেষ রাকাতে সালাম ফেরাতেন।’’
.
-আলমুজামুল আওসাত, তবারানী খ. ২, পৃ. ৩৬৮ আলমু’জাম আবু সায়ীদ ইবনুল আরাবী-লিসানুল মীযান খ. ৭, পৃ. ২৭৮, ৫ : ২৪২)
.
🌻সনদের মান : সনদের সকল রাবী পরিচিত ও প্রসিদ্ধ এবং উত্তম স্মৃতিশক্তির অধিকারী ও নির্ভরযোগ্য।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন