প্রকৃত শান্তির পথ

মহানবী (সাঃ) আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে শান্তির শ্বাশত পয়গাম নিয়ে পৃথিবীতে আবির্ভূত হন এবং দুনিয়াব্যাপী শান্তি, শৃংখলা ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করে যান। কিন্তু তিনটি কারণে ব্যক্তিগত, সামাজিক ও জাতীয় পর্যায়ে অশান্তি বিস্তার লাভ করে।

 (১) সম্পদের প্রাচুর্য ও এর প্রতি অতিরিক্ত মোহ (২ ) বংশ মর্যাদার গৌরব ও অহংকার (৩) ক্ষমতার দাপট। এই তিনটি উপসর্গই ব্যক্তি থেকে শুরু করে দেশ ও দুনিয়াব্যাপী অশান্তি সৃষ্টি করে।

তাই এ তিনটি রোগ দমন করতে পারলেই পৃথিবীতে আবারো সেই সোনালী যুগের স্বর্গীয় শান্তি ফিরে আসবে। অশান্ত পৃথিবী হবে শান্ত।

তিনটি উপসর্গের চিকিৎসাঃ

সম্পদের প্রাচুর্য ও এর প্রতি অতিরিক্ত আকর্ষণ বহু অপরাধ ও অশান্তি জন্ম দেয়। এ ব্যাধির ভিতর লুকিয়ে আছে অনেক অকল্যাণ। ধন-সম্পদের প্রতি আসক্তি কমানোর জন্য নবী করীম (সাঃ) যে পন্হা দেখিয়ে গিয়েছেন তাহল, মাল বেশী বেশী করে দান করা, আল্লাহর রাস্তায় খরচ করা। কারণ, মানুষের মনে যখন সম্পদের লোভ ও আকর্ষণ বেড়ে যায় তখন সে অন্যায়ভাবে সম্পদ উপার্জনের পিছনে ব্যস্ত হয়ে উঠে। তখন তার ভিতর সাতটি প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। 

 (১) সুদের কারবার ও লেনদেন শুরু করে। যা আল্লাহ তা'আলা কুরআনে এবং তাঁর রাসূল (সাঃ) হাদীসে হারাম ঘোষণা করেছেন।

(২) সম্পদের মোহে মানুষ অর্থ আত্মসাত, লুন্ঠন ও চুরি-ডাকাতি করে। অথচ আল্লাহ পাকের ঘোষণা হল, "তোমরা অন্যায়ভাবে পরস্পরের সম্পদ গ্রাস করো না।"

(৩) সম্পদের লোভে মানুষ একে অন্যের উপর জুলুম-অত্যাচার করে। অথচ ইসলামী শরীয়তে জুলুম সম্পূর্ন হারাম।

(৪) ধন-সম্পদ বৃদ্ধির সাথে সাথে এর প্রতি আকর্ষণও বাড়তে থাকে। তখন নিজ আত্মীয়স্বজন ও বৈধ দাবীদারদের প্রাপ্য অধিকার থেকে তাদের বঞ্চিত করার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। এতে আল্লাহ নারাজ হন এবং সমাজে অশান্তির সৃষ্টি হয়। ফলে বহু হানাহানি ও খুনাখুনির ঘটনা ঘটে।

(৫) মালের প্রতি মহব্বত ও লোভই মানুষকে চুরি-ডাকাতির প্রতি ঠেলে দেয়। অথচ নবী করীম (সাঃ) এরশাদ করেছেন, "যখন বান্দা চুরি করে, তখন তার ভিতর ঈমান থাকে না।অর্থাৎ তার অন্তর থেকে ঈমান চলে যায়"।

(৬) মালের প্রতি লোভ থাকার কারণে মানুষ পাওনাদারের ঋণ পরিশোধ করে না। অথচ হাদীসে এসেছে, কারো কাছে যদি অন্য কারো দু'টো পয়সাও পাওনা থাকে তবে এর বিনিময়ে সে কেয়ামতের দিন পাঁচশ' রাকাআত নফল নামাযের সওয়াব নিয়ে যাবে।

(৭) সম্পদের প্রাচুর্য এবং ভালবাসা মানসিক অশান্তি সৃষ্টি করে। ঘুম, থাকা, খাওয়া সবকিছুতেই পেরেশানী অনুভব হয়। জীবনের প্রতিক্ষেত্রেই অশান্তি ও মানসিক অস্বস্তি বিরাজ করে।

তাই সম্পদের মোহ থেকে অন্তরকে মুক্ত করার জন্য এবং পেরেশানী থেকে বাঁচার জন্য নবী করীম ( সাঃ)- এর বাতলে দেয়া পথ হল বেশী বেশী করে দান-সদকা করা। এতে মালের প্রতি মহব্বত কমবে এবং মালে বরকত হবে। অপরদিকে দুনিয়া ও আখেরাতে শান্তি অর্জিতহবে।

আল্লাহর রাস্তায় দান করলে তা আল্লাহর কাছে জমা হয় এবং আল্লাহ পাকের রহমত নাযিলের উছিলা হয়। টাকার ধর্ম হল এই য, তা যতই খরচ করা হবে ততই আরাম হবে। যতই জমা করা হবে ততই পেরেশানী বাড়বে।

পৃথিবীর ফাসাদ সৃষ্টির আর একটি উপসর্গ হল, বংশ মর্যাদার গৌরব। আল্লাহ পাকের কাছে এই বংশ গৌরবের কোন মূল্য নেই। বরং আল্লাহ পাকের ঘোষণা হল, "মুমিনদের মধ্যে যে যত মুত্তাকী-পরহেযগার, তাঁর সম্মান আল্লাহর কাছে তত বেশী"।

অশান্তির আর একটি উৎস হল শক্তি। শারীরিক, অর্থনৈতি,  সামরিক যেকোন শক্তিই হোকনা কেন এর দ্বারা দুনিয়াতে চরম অশান্তি সৃষ্টি হয়। শক্তির লড়াইয়ে আজ সারাটা দুনিয়া বিপর্যস্ত। ফাসাদে ভরে গেছে পৃথিবী। শক্তির দাপটে তছনছ হচ্ছে বিশ্ব মানবতা। তাই শক্তির এই মহড়াকে দমন করার জন্য নবী করীম (সাঃ) এক তরিকা বাৎলে দিয়েছেন। আর তা হল ক্ষমা। ক্ষমা একটা মহৎ গুন। এর দ্বারা শক্তির ভারসাম্য রক্ষা হয়। সম্মান আরো বাড়ে।

মক্কাবাসীরা নবী করীম (সাঃ)-কে অমানুষিক জ্বালাতন-নির্যাতন করেছিল। শান্তির দূত তাদেরকে মক্কা বিজয়ের সময়ে উদর চিত্তে ক্ষমা করে দিয়েছেন। প্রকৃত বিনয় ও নম্রতার মধ্যে রয়েছে দুনিয়া ও আখেরাতের কামিয়াবি ও শান্তি।         
                                                                                           

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Post a Comment (0)

নবীনতর পূর্বতন