হিজরী সনের ইতিকথা



হিজরী-সন বা চান্দ্রমাসের হিসাব রাখা সকল মুসলমানের উপরেই ফরযে কেফায়া। ফলে পরোক্ষভাবে হিজরী সন-তারিখের হিসাব রাখাও একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় দায়িত্ব। তাছাড়া, হিজরী-সন তারিখের ব্যবহার শুধুমাত্র মুসলমানদের জাতীয় গৌরবের একটি প্রতীকই নয়, অত্যন্ত বরকতেরও কারণ।



আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ "তিনিই সে মহান সত্তা, যিনি বানিয়েছেন সূর্যকে উজ্জ্বল আলোকময়, আর চন্দ্রকে স্নিগ্ধ আলো বিতরণকারীরূপে এবং অতঃপর নির্ধারিত করেছেন এর জন্য মনযিলসমূহ, যাতে করে তোমরা চিনতে পার বছরগুলোর সংখ্যা ও হিসাব।-সূরাইউনুস-১০ঃ০৫।



পৃথিবীর বিভিন্ন জাতি বিভিন্ন ঘটনার স্মরণে বিভিন্ন সালের প্রবর্তন করেছে। আর এ সালগুলো চালু হয়েছে চাঁদ বা সূর্যকে অবলম্বন করে।



মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর মদীনায় হিজরতের স্মরণে মুসলিম-বিশ্ব তাদের দৈনন্দিন জীবনে যে একটি পৃথক সনের ব্যবহার করে থাকেন, সেটাই হিজরী সন। তাই এ সনের প্রকৃত ইতিহাস জানা আমাদের অবশ্য কর্তব্য।

 

হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর হিজরতের তারিখ নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। তার অবশ্য বিভিন্ন কারণও রয়েছে। কেউ মক্কা পরিত্যাগের দিনকে, কেউ কোবা-পল্লিতে পৌঁছার দিনকে, কেউ আবার আবু আইয়ুব আনসারীর বাড়ীতে অবতরণের দিনকে হিজরতের তারিখ হিসাবে গণ্য করেছেন।



মুসলমানরা প্রাণের চেয়েও তাদের নবীকে (সাঃ) বেশী ভালবাসেন। তাই হিজরতের পর পরই তারা মহানবীর হিজরতকে চির স্মরণীয় করে রাখার উদ্দেশ্যে হিজরী সন চালু করেন।



Encyclopedia of Islam -এর বর্ণনানুযায়ী হযরত আবু বকর (রাঃ)-এর খেলাফতকালে ইয়ামানের গভর্নর ইয়ালাব বিন উমাইয়া সর্বপ্রথম হিজরী সন-তারিখ ব্যবহার করেন। আর সরকারীভাবে হিজরী সন-তারিখ কার্যকর হয় মহানবীর মহাপ্রয়াণের ৬ বছর পর হযরত ওমরের (রাঃ) খেলাফতকাল থেকে।



হযরত ওমর (রাঃ) সকল মুসলমানদের জন্য একটি পৃথক ইসলামী সন-তারিখ প্রবর্তনের জন্য মজলিশে শুরা বা পরামর্শসভা আহবান করলেন। সেখানে হযরত ওসমান (রাঃ) ও হযরত আলী (রাঃ)-সহ বিশিষ্ট সাহাবীগণ উপস্হিত ছিলেন। এবং সকলেই মত প্রকাশ করলেন।



এ ব্যাপারে বিভিন্ন জন বিভিন্ন মত দিতে শুরু করালেন। কেউ বললেন, মহাবীর (সাঃ) জন্ম-মাস থেকেই সনটি চালু করা হোক। কেউ বললেন নবুয়তের মাস থেকে শুরু করা হোক।আবার কেউ বললেন, ওফাতের মাস থেকে শুরু করা হোক। কিন্তু কোন মতের উপরই ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত হলো না।



পরিশেষে হযরত আলী (রাঃ) হিজরতের পর থেকে মহানবীর (সাঃ) চরম সাফল্যের কথা উল্লেখ করে সে থেকে সন গণনার প্রস্তাব করলে মজলিশে শুরার সমবেত সদস্যবৃন্দ একবাক্যে তাতে সমর্থন দিলেন।



প্রকৃতপক্ষে রসূলুল্লাহ (সাঃ) হিজরতের মাধ্যমে সাফল্যের যে অনন্য দৃষ্টান্ত স্হাপন করেছেন, তার নজির পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল।

 

হিজরতের তারিখের ব্যাপারে যদিও ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতভেদ আছে, তথাপি সকল ঐতিহাসিক এ ব্যাপারে একমত যে, হিজরত হয়েছিল রবিউল আওয়াল মাসে।হিজরতের তারিখ থেকে হিজরী বর্ষ গণনা শুরু হয়নি, বরং হিজরতের বছর থেকে হিজরী সন চালু হয়েছে।



যেহেতু চান্দ্র-বর্ষের প্রথম মাস ছিল মহররম। তাই ১লা মহররম থেকে হিজরী বর্ষ শুরু হয়েছে। তাছাড়া মহানবী (সাঃ) সাহাবীদেরকে (রাঃ) মদীনায় হিজরত করার জন্য মহররম মাসেই নির্দেশ দিয়েছিলেন। প্রকৃতপক্ষে হিজরী সনের ইতিহাস যতটা গুরুত্ব বহন করে, পৃথিবীর ইতিহাসে অন্য কোন সনের সেরূপ নজির নেই।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Post a Comment (0)

নবীনতর পূর্বতন