মহানবী (সাঃ) যে সময়ে মক্কায় আবির্ভূত হয়েছিলেন, সে সময়টিকে আয়্যামে জাহিলিয়্যাত- মূর্খতা বা অন্ধকারের যুগ বলা হয়। জাহিলী যুগে আরবরা ছিল একেবারে অসভ্য। মদ, জুয়া, চুরি, ডাকাতি, লুন্ঠন, যিনা-ব্যাভিচার, অশ্লীলতা, বেহায়াপনা, বিভিন্ন কুসংস্কার প্রভৃতিতে তারা আকন্ঠ নিমজ্জিত ছিল। ইসলাম তাদেরকে সুশিক্ষিত ও সভ্য জাতিতে পরিণত করেছে। তাদেরকে নীচতা ও লাঞ্ছনা থেকে সভ্যতার শীর্ষ চুড়ায় আরোহন করিয়াছে।
বর্তমানে ইসলামী শিক্ষা না থাকার কারণে শিক্ষা- দীক্ষা, জ্ঞান-বিজ্ঞান প্রভৃতির প্রভূত উৎকর্ষ সাধন হওয়া সত্বেও মানুষ সভ্য ও সৎ হতে পারছে না; যার প্রমাণ সর্বত্র দূর্নীতি, নারী নির্যাতন, গুম, খুন, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, মদ, জুয়া, বিভিন্ন প্রকল্পে সীমাহীন চুরি ও আত্মসাৎ ইত্যাদি। আর দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এ সকল অপকর্মের সাথে শিক্ষিত ব্যক্তিরাই জড়িত।
সাধারণ শিক্ষা যেখানে শুধু জ্ঞান শিক্ষা দেয়, সেখানে ইসলাম শুধু জ্ঞান শিক্ষা দেয় না। বরং ইসলাম মানুষকে উন্নত নৈতিকতা, যথার্থ দায়িত্বপরায়ণতা, জবাবদিহিতা এবং প্রকৃত পক্ষে আদর্শবান মানুষ হিসেবে গড়ে উঠার শিক্ষা দেয়।
জ্ঞানের শ্রেষ্ঠত্বের কারণে কোনো ব্যক্তিকে ইসলাম শ্রেষ্ঠ বা উত্তম ব্যক্তি হিসেবে আখ্যায়িত করে না। বরং উন্নত নৈতিক চরিত্র, নির্ভেজাল আমল এবং আল্লাহভীতির কারণে তাকে শ্রেষ্ঠ বা উত্তম হিসেবে আখ্যায়িত করে। আল্লাহ তা'আলা এ প্রসঙ্গে বলেন, "তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তি অধিক মর্যাদাবান, যে আল্লাহকে সবচেয়ে বেশী ভয় করে"। - (সূরা আল হুজুরাত-৪৯ঃ১৩)।
ইসলামী শিক্ষা মানুষের মধ্যে মানবতা বা মানবিক গুণাবলী তৈরী করে। ইসলাম পারস্পরিক ভালবাসা, স্নেহ মমতা, সম্মান শ্রদ্ধা ও একে অপরকে সহযোগিতার শিক্ষা দেয়। ফলে মানুষ অন্য কোনো মানুষ বা জীব জন্তুর ক্ষতি না করে উপকার করে থাকে। ফলে সমাজে কল্যাণের এক আবহ তৈরী হয়।
যাদের অন্তরে আল্লাহভীতি থাকে না তারাই অনাচারে লিপ্ত হয়। এ জন্য মহানবী (সাঃ) সবসময় দু'আ পড়তেন, " হে আল্লাহ, আমার অন্তরে তাকওয়া দান কর এবং তা পবিত্র রাখ, তুমিই তার উত্তম পবিত্রতাকারী, তুমিই তার অভিভাবক ও পরিচালক। -(মুসলিম শরীফ)।
ইসলাম দায়িত্বপরায়ণ ও জবাবদিহিতার চেতনা সম্পন্ন মানুষ তৈরী করে। কর্তব্য ও জবাবদিহিতার ক্ষেত্রকে ইসলাম সুপ্রশারিত করে। দায়িত্বের অবহেলা করলে বা ফাঁকি দিলে তাকে এ দুনিয়াতে তো জবাবদিহি করতেই হবে এবং ক্ষেত্র বিশেষ শাস্তিও পেতে হবে। অধিকন্তু এজন্য আখিরাতেও তাকে জবাবদিহি করতে হবে এবং যথাযথ জবাবদিহি করতে ব্যর্থ হলে তাকে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে হবে।
ইসলামী শিক্ষার মাধ্যমে মানুষকে শুধু জ্ঞান শিক্ষা দেওয়া হয় না। বরং প্রকৃত অর্থে একজন সৎ, সুন্দর, দায়িত্বশীল ও জবাবদিহিতা সম্পন্ন মানুষরাপে গড়ে তুলা হয়। অর্থাৎ শুধু পড়ালেখা করিয়ে জ্ঞান শিখানো হয়না, বরং মানসিক, দৈহিক, চারিত্রিক এবং বাস্তব ক্ষেত্রে কর্ম অনুশীলনের এমনকি দৈনন্দিন জীবনের খুটিনাটি আচার-আচরণ ও সৌজন্যও শিক্ষা দিওয়া হয়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন