ব্যবসা-বাণিজ্যে হালাল-হারাম। খতীব আব্দুচ্ছালাম বাগেরহাটী, পিলখানা, ঢাকা।

ইসলাম আল্লাহ তা'আলার মনোনীত একমাত্র পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্হা হিসেবে জীবনের সব ক্ষেত্রের মতো ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষত্রেও কল্যাণ ও অকল্যাণের বিষয়গুলো স্পষ্ট করে বর্ণনা করেছে।

 ক্রয়-বিক্রয়ের প্রক্রিয়াকে মূলত ব্যবসা-বাণিজ্য বা আরবীতে তিজারত বলা হয়। আল কুরআনের আট-নয়টি আয়াতে শব্দটির উল্লেখ আছে। ব্যবসা-বাণিজ্য বা তিজারত অর্থ-'মুনাফা লাভের উদ্দেশ্যেে মূলধন বিনিয়োগ ও ব্যবহার করা'। 'আল্লাহতা'আলা ক্রয়-বিক্রয় ও ব্যবসা-বাণিজ্যকে হালাল করেছেন এবং সুদকে করেছেন হারাম।'-( সূরা বাক্বরা-০২ঃ২৭৫)।

মানুষের জীবনযাত্রার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হলো ক্রয়-বিক্রয় ও ব্যবসা-বাণিজ্য। এ কারণে পবিত্র কুরআন ও হাদীসে এর উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। কিন্তু আজ মানুষ বিশেষত মুসলমানরা এ হালাল ব্যবসার সাথে বিভিন্নভাবে হারামের মিশ্রণ ঘটিয়েছে। 

খাদ্যদ্রব্যসহ অন্যান্য জিনিসে ভেজাল মেশানো, মজুদদারীর মাধ্যমে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে ফায়দা লুটা, প্রতারণাপূর্ণ দালালীর মাধ্যমে উচ্চ দাম হাঁকা, মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণের নিমিত্তে লোভনীয় বিজ্ঞাপন ও কৃত্রিম উপায় অবলম্বন করা, মিথ্যা শপথ করা, বিক্রিত মালের দোষ ত্রুটি গোপন করা, Over ও under invoicing এর মাধ্যমে ফায়দা হাসিল করা, বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে Duty, Vat না দেয়া, চোরাই কারবার করা, সরকারের প্রাপ্য কর ফাঁকি দেয়া, মাপে বা ওজনে কারচুপি করা ইত্যাদি সকল প্রকার অপকৌশল আল কুরআন ও হাদীসের আলোকে অন্যায়ভাবে আত্মসাৎ এর অন্তর্ভুক্ত। 

ইসলামে ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে অসাধু পন্থা অবলম্বনের সুযোগ চিরতরে বন্ধ ঘোষণার পরও যারা অবৈধ সুযোগ গ্রহণের চেষ্টা করে তাদের জন্য কঠোর শাস্তির কথা ঘোষিত হয়েছে। মহানবী (সাঃ) বলেছেন- "কিয়ামতের দিন অসাধু ব্যবসায়ীরা গুনাহগারদের কাতারে উত্থিত হবে" (তিরমিয)।                               

ইসলামী অর্থনীতিতে ব্যবসায়ের গুরুত্ব অপরিসীম। বাঁচার জন্য মানুষের রিজিকের  প্রয়োজন। এ রিজিক পৃথিবীতে সংগ্রাম করে আহরণ করতে হবে। রিজিক আহরণের জন্যে মানুষকে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিভিন্ন পেশা গ্রহণ করতে হয়। 

তাছাড়া পণ্য দ্রব্যাদির আদান-প্রদান এমন একটি প্রয়োজন, যা না হলে মানব জীবন অচল হয়ে পড়ে। কারণ, আমার নিকট যা আছে অন্যের নিকট তা নাই, আবার আমার যা নাই তা অন্যের নিকট আছে। তাই পারস্পরিক বিনিময়ের জন্য ইসলামী শরীয়ত ক্রয়-বিক্রয় ব্যবসা-বাণিজ্যকে জায়েজ ঘোষণা করেছে। 

ব্যবসা-বাণিজ্য বা ক্রয়-বিক্রয়ের মাধ্যমে উপার্জিত অতিরিক্ত অংশকে মুনাফা বলা হয়। এ ধরনের মুনাফাকে ইসলামে হালাল ঘোষণা করা হয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে পরস্পরের মধ্যে মুনাফার বিনিময় হয়। এখানে একজন অন্যজনের প্রয়োজন সরবরাহ করার জন্য সময়, মেধা ও শ্রম বিনিয়োগ করে থাকে এবং তার বিনিময় দান করে। 

ব্যবসার ক্ষেত্রে অর্থ দ্রব্যে এবং দ্রব্য অর্থে রূপান্তরিত হয়। এ রূপান্তরের বিভিন্ন  পর্যায়ে বহু লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়, অর্থের প্রবাহ চালু হয় এবং মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বেড়ে যায়। ফলে দেশে নতুন নতুন শিল্প-কারখানা গড়ে ওঠে, ব্যবসার নতুন নতুন দিগন্ত খুলে যায় এবং উন্নয়নে গতি সঞ্চারিত হয়। 

সাহাবায়ে কিরাম (রাঃ) ব্যবসা-বাণিজ্য করতেন এবং তাদের মধ্যে সৎগুণাবলী পূর্ণমাত্রায় বিদ্যমান ছিল। ব্যবসা-বাণিজ্য তথা ক্রয়-বিক্রয় নবী-রাসূলদের গুণের অন্তর্ভুক্ত। আম্বিয়ায়ে কিরাম ব্যবসা পেশায় নিয়োজিত থেকে মানুষের উপকার সাধন করেছেন। 

যে ব্যক্তি ব্যবসা-বাণিজ্য বা উপার্জনের ব্যস্ততার মধ্যেও নিজের অন্তরকে আল্লাহ তা'আলার স্মরণে নিবদ্ধ রাখতে পারেন, তার পক্ষে উপার্জনে প্রবৃত্ত হওয়া খুবই উত্তম। যিনি ব্যতিব্যস্ততার মধ্যেও আল্লাহ তা'আলার সাথে অন্তরকে সংযুক্ত রাখতে পারেন, তিনিই প্রশংসনীয়। তাই সৎ, নিষ্ঠাবান ও বিশ্বস্ত ব্যবসায়ীরা আল্লাহ তা'আলার ও তাঁর রাসূলের কাছে খুবই প্রিয় ও পছন্দনীয়। নবী করীম (সাঃ) বলেছেন- "সত্যবাদী ও আমানতদার ব্যবসায়ী কিয়ামতের দিন নবী, সিদ্দীক এবং শহীদদের সাথে থাকবে"-(তিরমিয)।                                                          
                                                                                           
           
                                                                               



                    

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Post a Comment (0)

নবীনতর পূর্বতন