আদর্শ ভিত্তিক জীবন "আল্লাহ তা'আলার সাথে সম্পর্ক স্হাপনের একমাত্র পথ"

মানুষ মানুষ হিসেবে যদি দুনিয়াতে বসবাস করতে চায়, তবে তার জন্য একটা "আদর্শ ভিত্তিক জীবন" এর প্রয়োজন। আদর্শ ভিত্তিক জীবন যদি না হয়, তবে মানব জীবনের কোন মূল্য ও বৈশিষ্ট্য আর অবশিষ্ট থাকেনা। প্রশ্নের উদ্রেক হতে পারে। কোন আদর্শের ভিত্তিতে আমাদের জীবন গঠিত হলে আমাদের জীবন মূল্যবান ও সার্থক হবে। আবার সে আদর্শ কার কাছে পাওয়া যাবে এবং তিনি কে?


কেননা বর্তমানে সমগ্র বিশ্বে বহু আদর্শ প্রচলিত রয়েছে। যেমনঃ- নফসের তৈরী আদর্শ, শয়তানের দেয়া আদর্শ, মানব জাতির মনগড়া আদর্শ সমূহ এবং সর্বোপরি সমগ্র সৃষ্টি জগতের খালেক মালেক আল্লাহ তা'আলার দেয়া আদর্শ। বস্তুতঃ এসব আদর্শের মধ্যে কোন আদর্শের ভিত্তিতে আমাদের জীবন গঠন করলে আমাদের দুনিয়া আখেরাত, কবর, হাশর সবই মূল্যবান হবে, সে আদর্শ কোথায় ও কার কাছে পাওয়া যাবে  এবং তিনিকে?


আল্লাহ তা'আলা অত্যন্ত দয়া ও মেহেরবানী করে পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেছেন- হে আমার বান্দাহগণ! তোমরা যদি জীবনকে মূলবান বানাতে চাও, তবে দুনিয়ার সব আদর্শ পরিত্যাগ করে আমার দেয়া আদর্শকে আঁকড়ে ধর। "অবশ্যই তোমাদের জন্য রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ..। -সূরা আল আহযাব-৩৩ঃ২১)।


মানব রচিত যত সব " আদর্শ ' বা "জীবন ব্যবস্হা" প্রচলিত রয়েছে, সবই তো মানুষের জ্ঞানের পরিধির মধ্যে সীমাবদ্ধ। বলা বাহুল্য, মানুষের জ্ঞান অত্যন্ত সীমিত বিধায় তার জ্ঞানের পরিধি অতি সংকীর্ণ। সুতরাং সে রকম মানুষের দেয়া "আদর্শ" বা "জীবন ব্যবস্হা" সারা দুনিয়ার মানুষের জন্য কোন ভাবেই সম্পূর্ণ হতে পারে না। মানুষের পক্ষে সম্পূর্ণ "আদর্শ " বা "জীবন ব্যবস্হা" প্রদান করা একবারে অসম্ভব ব্যাপার। পক্ষান্তরে এ ধরনের পরিপূর্ণ "আদর্শ " বা জীবন ব্যবস্হা" সারা দুনিয়ার মানুষের জন্য দিতে পারেন এক মাত্র আল্লাহ তা'আলা। যিনি সব জ্ঞানের অধিকারী ও সর্বাবস্থায় সর্বস্হানে বিরাজমান এবং সর্ব বিষয়ে সম্পূর্ণ ওয়াকেফহাল। 


এখন পরিষ্কারভাবে বুঝা গেল যে,আদর্শ প্রেরণ কারী দাতা হলেন আল্লাহ তা'আলা আর এই আদর্শের ধারক ও প্রাপক হল বান্দাহ। আল্লাহ এবং বান্দাহর মধ্যে একজন মধ্যস্হতাকারী রয়েছেন এবং তিনিই হলেন এই আদর্শের আনয়নকারী বাহক হযরত মুহাম্মদ মুস্তাফা (সাঃ)। তাই মহানবী (সাঃ) বলেন যে, "হে আমার উম্মতের লোক সকল! আমার মাধ্যমে যদি তোমরা আল্লাহ তা'আলার সাথে সম্পর্ক স্হাপন করতে চাও, তবে আমার 'সুন্নাত' এর যে কাঠামো পেশ করেছি তা অবলম্বন কর"।


মূলতঃ মানব জীবনের ছয়টি পর্যায় বা স্তর রয়েছে। যথাঃ- (১) ব্যক্তিগত জীবন, (২) পারিবারিক জীবন, (৩) সামাজিক জীবন,  (৪) অর্থনৈতিক জীবন, (৫) রাষ্ট্রীয় জীবন এবং (৬) আন্তর্জাতিক জীবন। মানব জীবনের উল্লেখিত ছয়টি পর্যায় বা স্তরের ধারাকে হযরত মুহাম্মদ মুস্তাফা (সাঃ) এর জীবনের ছয়টি পর্যায় বা স্তরের ধারার সাথে সমন্বয় সাধন পূর্বক সংযুক্ত করে নেয়ার মাধ্যমেই আল্লাহ তা'আলার সাথে সম্পর্ক স্থাপিত হবে। তাই মহান আল্লাহ তা'আলা পবিত্র কুরআনে বলেন- যে ব্যক্তি রসূল (সাঃ) এর আনুগত্য করবে, সে আল্লাহ তা'আলার আনুগত্য করল "। -( সূরা নিসা-৪ঃ৮০)।


মহানবী (সাঃ) বলেনঃ- আমি যা বলি, তা আমার কথা নয়, বরং আল্লাহ তা'আলারই কথা"। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা'আলা বলেন- রসূল (সাঃ)  যা বলেন তাতো আমারই কথা। -(সূরা নাজম- ৫৩ঃ৩-৪)। মহানবী (সাঃ) এর আদর্শ মতে ঈমানদারকে চলতে হবে। আল্লাহ তা'আলা পবিত্র কুরআনে বলেন- রসূল (সাঃ) তোমাদেরকে যা দেন, তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন, তা থেকে বিরত থাক এবং আল্লাহ তা'আলাকে ভয় কর। -(সূরা হাশর-৫৯ঃ৭)।


মহানবী (সাঃ) এর জীবনের আদর্শ  মোতাবেক আমাদের জীবনের সব কাজ হতে হবে। তাই যদি হয়, আমরা বাঁচতে পারবো। নতুবা আমাদেরকে জাহান্নামেই যেতে হবে (নাউজুবিল্লাহি মিন জালিক)। আল্লাহ তা'আলা আমাদের সবাইকে রসূল (সাঃ) এর আদর্শ মোতাবেক আমল করার তাওফীক দান করুন। -(আমীন)।


লেখকঃ খতীব আব্দুচ্ছালাম বাগেরহাটী, পিলখানা, ঢাকা। 



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Post a Comment (0)

নবীনতর পূর্বতন