ভালো কথা ও মধুর ভাষা


ভালো কথা বলতে সাধারণ মানুষের সাথে এমন কথা বলা যা দ্বারা সে প্রশান্তি ও আনন্দ লাভ করে, তার অন্তরে ভালো প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। যে কথার মাধ্যমে সমাজে সুফল বয়ে আনে, অশান্তি দূরীভূত হয় এবং  যে কথার দ্বারা কল্যাণের পথ প্রশস্ত হয় ও অকল্যাণেরন পথ রুদ্ধ হয় তাই ভালো কথা। 


খারাপ কথা সত্য হলেও  বলা উচিত নয় এই কারণে যে, এটা অভ্যাসে পরিণত হয়ে অপাত্রে প্রয়োগ হবে। যেমন কেউ যদি শয়তানকে অভিসম্পাত করতে থাকে তবে সে একদিন অভ্যস্ত হয়ে নিজ আত্মীয় স্বজনকে এমনকি সাধারণ মানুষকেও অভিসম্পাত করতে আরম্ভ করবে। 


ভালো কথা অর্থে আল কুরআনে ব্যবহৃত পরিভাষাসমূহঃ আল কুরআনুল কারীমে 'আল কালিমাতুত তাইয়্যিবাহ' তথা ভালো কথাকে কাওলুম মারূফ, কাওলুম মায়সূর, কাওলুন হাসান,কাওলুন কারীম এবং কাওলুন লায়্যিন ইত্যাদি শব্দ দ্বারা বুঝানো হয়েছে। 


আল্লাহ তা'আলা সুন্দর কথা বলার নির্দেশ দিয়ে বলেন - "আর মানুষের সাথে সুন্দর কথা বল"। -(সূরা আল বাকরা -০২ঃ৮৩)। আল কুরআনুল কারীমের অপর আয়াতে আল্লাহ তা'আলা বলেন - "তোমরা (হযরত মূসা ও হারুন) ফিরাউনের নিকট যাও, সে তো সীমালঙ্ঘন করেছে। তোমরা তার সাথে নরম কথা বলবে"।-(সূরা ত্বহা- ২০ঃ৪৩-৪৪)।


সমাজে শান্তি, সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি বৃদ্ধিতে এবং সুখ -সমৃদ্ধ সমাজ গঠনে পারস্পরিক ভালো কথা ব্যবহারের বা মধুর ভাষা প্রয়োগের কোন বিকল্প নেই। এ জন্য আল কুরআন ও হাদীসে বিভিন্নভাবে ভালো কথার প্রতি মানুষকে উৎসাহিত করা হয়েছে। পরকালীন সাওরের ঘোষণা দিয়ে ভালো কথার প্রতি মানুষকে প্রলুব্ধ করা হয়েছে।


 ভালো কথা বা মধুর ভাষা একে অপরকে সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ করে। চরম শত্রুকেও অনুপম ভাষাশৈলী দ্বারা পরম বন্ধুতে পরিণত করা সম্ভব। সমাজ থেকে ঘৃণা-বিদ্বেষ দূরীভূত করার মহৌষধ হচ্ছে ভালো কথা। নরম কথা মধুর ভাষা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মধ্যে লুকিয়ে থাকা বিদ্বেষকে ধৌত করে দেয়।


ভালো কথার প্রতি গুরুত্বারোপ করতে গিয়ে মহানবী (সাঃ) প্রতিটি ভালো কথাকে সাদাকাহ বলে অভিহিত করেছেন। আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সাঃ) বলেন- " ভালো কথা সাদাকাহ এবং নাযের দিকে ধাবিত প্রতিটি পদক্ষেপ সাদাকাহ"। -(মুসনাদে আহমদ)।


দান জাহান্নামের আগুন নির্বাপিত করে। যাদের দান করার সামর্থ নেই তাদের জন্য ভালো কথাকে দানের বিকল্প হিসেবে হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে। মূলত ভালো কথা দ্বারা মানুষের অনেক কল্যাণ সাধিত হয়। কঠোর ভাষা দিয়ে মানুষের মন জয় করা যায় না। 


কাজেই আমাদের সকলের ভালো কথা ও মধুর ভাষা চর্চা ও অনুশীলন করা উচিত। সমাজের সর্বস্তরে ভালো কথার চর্চা বৃদ্ধি করতে পারলে সমাজের মানুষের মধ্যে শান্তির বাতাস প্রবাহিত হতে পারে বলে আশা করা যায়। আল্লাহ তা'আলা আমাদের সকলকে তাওফীক দান করুন। -(আমীন)। 


লেখকঃ খতীব, আব্দুচ্ছালাম বাগেরহাটী, পিলখানা, ঢাকা। 












1 মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন