আর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সুস্হতার সংজ্ঞা বর্ণনা করছে এভাবে ঃ " সুস্হতা হচ্ছে পূর্ণ শারীরিক, মানসিক, সামাজিক ও আত্মিক নিরোগ অবস্থা। আর শুধুমাত্র রোগ বা দুর্বলতার অনুপস্থিতই সুস্থতা নয়।" বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রদত্ত সুস্থতার এই সংজ্ঞায় সুস্থতার চারটি উপাদান বা ধরণ বিবৃত হয়েছে। আর সুস্থতার জন্য এই চারটি উপাদান সমানভাবে প্রয়োজন। আর সুস্থতার জন্য প্রয়োজনীয় সেই চারটি উপাদান হচ্ছেঃ
এক. দৈহিক সুস্থতাঃ দৈহিক সুস্থতা নিশ্চিত করতে প্রয়োজন দেহের জন্য উপকারী খাদ্য ও অভ্যাস গ্রহণ এবং দেহের জন্য ক্ষতিকর খাদ্য ও অভ্যাস বর্জন, যাতে করে দেহ তার স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড সুষ্ঠ, সুন্দর ও স্বাভাবিকভাবে চালিয়ে যেতে পারে।
দুই. মানসিক সুস্থতাঃ মানসিক সুস্থতা ব্যতীত দৈহিক সুস্থতা অর্জিত হয় না এবং দৈহিক সুস্থতা ছাড়া মানসিক সুস্থতা হাসিল হয় না।
তিন. সামাজিক সুস্থতাঃ সামাজিক সুস্থতা বলতে বুঝানো হয় সমাজের অন্যান্য সদস্যদের সাথে উপযুক্ত সম্পর্ক তৈরী এবং তাদের সাথে যোগাযোগের দক্ষতা। এজন্যই অন্য মানুষের সাথে মিশতে না পারাকে একটি সামাজিক অসুস্থতা হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়।
চার. বুদ্ধিবৃত্তিক সুস্থতাঃ বুদ্ধিবৃত্তিক সুস্থতা হচ্ছে উপলব্ধি ও চিন্তা-ভাবনার সুস্থতা। দৈহিকভাবে সুস্থ একজন মানুষের যথার্থ চিন্তা করতে না পারা, উপযুক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে না পারা একটি রোগ। আর সেটি বুদ্ধিবৃত্তিক রোগ। সুস্থতার এই চারটি উপাদান এক সাথে কোন ব্যক্তির মধ্যে যখন বিদ্যমান থাকে, তখনই আমরা সেটাকে পরিপূর্ণ সুস্থতা মনে করতে পারি।
ইসলামে সুস্হতার গুরুত্বঃ মানুষের মধ্যে উন্নত নৈতিক ও মানবিক গুণাবলীর সমাহার ঘটিয়ে আত্মিকভাবে পুতঃপবিত্র হিসাবে গড়ে তোলা যেমন ইসলামের লক্ষ্য। তদ্রূপ দৈহিক ও শারীরিক সুস্হতা অর্জন ও সংরক্ষণের মাধ্যমে সুস্থ-জীবন গঠনও ইসলামের অন্যতম লক্ষ্য। আর মানুষের দৈহিক সুস্থতা ও শারীরিক নিরোগতার ব্যাপারে ইসলাম কতটা তৎপর তা আমরা বুঝতে পারি এভাবে-
এক. ইসলামপূর্ব জাহিলিয়্যাতের সময়ে প্রচলিত বিভিন্ন মানব-রচিত ধর্ম বা স্খলিত আসমানী ধর্ম মানুষকে যে শিক্ষা দিয়ে আসছিল, সেখানে মানুষের দৈহিক সুস্থতা ও শারীরিক নিরাপত্তার প্রতি কোনরূপ ভ্রূক্ষেপ ছিল না। ছিল না তার কোন গুরুত্ব বা মূল্য। বরং দেেহকে নানাভাবে কষ্ট দেওয়াকেই মনে করা হতো ইবাদত। শরীরের স্বাভাবিক ও প্রাকৃতিক চাহিদা পূরণ না করাকেই ভাবা হতো ধর্ম। এমন সময়ে এসে ইসলামের নবী সুস্পষ্ট ঘোষণা দিলেনঃ " নিশ্চয়ই তোমার দেহেরও হক রয়েছে তোমার উপর। " - (সহীহ্ বোখারী, মুসনাদে আহমদ)।
দুই. নবী করীম (সাঃ) দৈহিক বিভিন্ন প্রকার রোগ- ব্যাধি থেকে আল্লাহ তা'আলার নিকট পানাহ্ চাইতেন এবং নিরাপত্তার দু'আ করতেন। হযরত আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (সাঃ) এই দু'আ করতেনঃ " হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট পানাহ্ চাই শ্বেতরোগ, উন্মাদনা, কুষ্ঠরোগ এবং অন্যান্য খারাপ রোগ থেকে। " -(সুনানে আবু দাউদ)।
তিন. নবী করীম (সাঃ) নিজে আল্লাহর নিকট আফিয়ত তথা সুস্থতা ও নিরাপত্তার জন্য দু'আ করতেন এবং উম্মতকে তা শিক্ষা দিতেন। হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত এক হাদীসে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেনঃ " হে লোক সকল! তোমরা আল্লাহ তা'আলার নিকট সুস্থতা কামনা করো ( কথাটি রাসূল (সাঃ) তিন বার উচ্চারণ করলেন)। অতঃপর বললেন, নিশ্চয়ই ঈমানের পর সুস্থতার চেয়ে শ্রেষ্ঠ কোন নিয়ামত কাউকে দেওয়া হয়নি। " -(সুনানে কুবরা লিন-নাসায়ী, মুসনাদে আহমদ)।
চার. সুস্থতার নিয়ামত লাভের বিপরীতে বান্দাকে আল্লাহ তা'আলার প্রশংসা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যেমন, হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেছেনঃ " ব্যাধিগ্রস্ত বা বিপদগ্রস্ত ব্যক্তিকে দেখে যে ব্যক্তি এই দু'আ পাঠ করবেঃ সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তা'আলার জন্য যিনি তোমাকে যে ব্যাধি বা মুসিবতে আক্রান্ত করেছেন তা থেকে আমাকে নিরাপদ রেখেছেন এবং অনেক সৃষ্টির উপর আমাকে মর্যাদা দান করেছেন, সে ঐ ব্যাধি বা মুসিবতে আক্রান্ত হবে না। " -(সুনানে তিরমিযী)।
পাঁচ. শরয়ী বিধি-বিধান আরোপের ক্ষেত্রে মানুষের দৈহিক সুস্থতা ও শারীরিক সক্ষমতার বিষয়টি বিবেচনায় রাখা হয়েছে। হাদীস শরীফে এ সম্পর্কিত এক বর্ণনায় হযরত ইমরান ইবনুল হুসাইন (রাঃ) বর্ণনা করেনঃ " আমি ভগন্দর রোগে আক্রান্ত ছিলাম। এ অবস্থায় সালাত আদায় সম্পর্কে রাসূল (সাঃ) - কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, তুমি দাঁড়িয়ে নামায আদায় করো। না পারলে বসে পড়ো। তাও না পারলে কাত হয়ে শুয়ে নামায আদায় করো। " -(সুনানে আবু দাউদ)।
মোটকথা, সুস্থতা আল্লাহ্- প্রদত্ত এমনি এক নিয়ামত- যার যথাযথ মূল্যায়ন করতে অধিকাংশ মানুষই ব্যর্থ হয়। আর তাই সুস্থতা হারিয়ে অসুস্থতার দেখা পেলেই তবে এর মূল্য বুঝতে পারে।
লেখকঃ খতীব আব্দুচ্ছালাম বাগেরহাটী, পিলখানা, ঢাকা।
মাশাআল্লাহ মাশা আল্লাহ
উত্তরমুছুনএকটি মন্তব্য পোস্ট করুন