আল্লাহ তা'আলা পবিত্র কা'বা গৃহকে বিশেষ মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য দান করেছেন। ফলে তা সর্বদাই মানবজাতির প্রত্যাবর্তনস্হল হয়ে থাকবে এবং মানুষ বরাবর তার দিকে ফিরে যেতে আকাঙ্খী হবে। কোন মানুষ কা'বা গৃহের যিয়ারত করে তৃপ্ত হয় না, বরং প্রতি বারই যিয়ারতের অধিকতর বাসনা নিয়ে ফিরে আসে। পবিত্র কা'বা গৃহ থেকে ফিরে আসার পর আবার সেখানে যাওয়ার আগ্রহ হজ্জ কবুল হওয়ার অন্যতম লক্ষণ।
এবিস্ময়কর ব্যাপারটি একমাত্র পবিত্র কা'বারই বৈশিষ্ট্য। নতুন জগতের শ্রেষ্ঠতম মনোরম দৃশ্যও এক-দু'বার দেখেই মানুষ পরিতৃপ্ত হয়ে যায়। পাঁচ-সাতবার দেখলে আর ইচ্ছাই থাকে না। অথচ এখানে না আছে কোন মনোমুগ্ধকর দৃশ্যপট, না এখানে পৌঁছা সহজ এবং না আছে ব্যবসায়িক সুবিধা, তা সত্ত্বেও এখানে পৌঁছার আকুল আগ্রহ মানুষের মনে অবিরাম ঢেউ খেলতে থাকে। লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয় করে অপরিসীম দুঃখ-কষ্ট সহ্য করে পবিত্র কা'বায় পৌঁছার জন্যে মানুষ ব্যাকুল আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে।
পবিত্র কা'বা গৃহ পৃথিবীতে আল্লাহ তা'আলার জীবন্ত নিদর্শন। সৃষ্টির আদিকাল থেকেই আল্লাহ তা'আলা কা'বাকে তাঁর মনোনীত বান্দাদের মিলনমেলা হিসেবে কবুল করেছেন। ভৌগোলিক ভাবেই গোলাকার পৃথিবীর মধ্যস্হলে কা'বা গৃহের অবস্থান। যা পৃথিবীর কেন্দ্রস্হল হিসেবে বিবেচিত।
আল্লাহ তা'আলা কা'বা গৃহের পবিত্র প্রাঙ্গণ কা'বার হরমকে মানুষের জন্যে সম্মিলন স্হল ও শান্তির আলয় করেছেন। শান্তির আলয় করার অর্থ মানুষকে নির্দেশ দেয়া যে, এ স্থানকে সাধারণ হত্যা ও যুদ্ধ-বিগ্রহ ইত্যাদি অশান্তিজনিত কার্যকলাপ থেকে মুক্ত রাখতে হবে। যেখানে আল্লাহ তা'আলা নিজেই বলেছেন- "আমি কা'বার হরমকে শান্তির আলয় করেছি। " -(সূরা বাক্বরা-০২ঃ১২৫)। এরপরও সেখানে প্রবেশকারীর মনে করোনা ভাইরাস সহ যেকোনো ধরনের মহামারীতে আক্রান্ত হওয়ার ভয় হবে? এটাতো ভাবাই যায়না।
এখানে মকাম- ইব্রাহীমের পাথর রয়েছে, যাতে মু'জেযা হিসেবে হযরত ইব্রাহিম (আঃ)-এর পদচিহ্ন অঙ্কিত হয়ে গিয়েছিল। কা'বা গৃহ নির্মাণের সময় হযরত ইব্রাহিম (আঃ) এ পাথরটি তিনি ব্যবহার করেছিলেন। -(সহীহ্ বুখারী)। হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, আমি এই পাথরে হযরত ইব্রাহিম (আঃ) এর পদচিহ্ন দেখেছি। যেয়ারতকারীদের উপর্যুপরি স্পর্শের দরুন চিহ্নটি এখন অস্পষ্ট হয়ে পড়েছে।-(কুরতুবী)।
তওয়াফের পর যে দু'রাকআত নামায মকামে-ইব্রাহীমে পড়ার নির্দেশ রয়েছে, তা হরমের যে কোন অংশে পড়লেই চলে। কেননা অধিকাংশ ফিকাহ্ শাস্ত্রবিদগণের মতে সমগ্র হরমটিই মকামে-ইব্রাহীম। স্বয়ং রসূলুল্লাহ (সাঃ) বিদায় হজ্জ্বের সময় তাওয়াফের পর কা'বা গৃহের সম্মুখে অনতিদূরে রক্ষিত মকামে-ইব্রাহীমের পেছনে এমনভাবে দাঁড়িয়ে দু'রাকআত নামায পড়লেন যে, কা'বা ছিল তাঁর সম্মুখে এবং কা'বা ও তাঁর মাঝখানে ছিল মকামে-ইব্রহীম।-(সহীহ্ মুসলিম)।
পবিত্র কুরআনে কা'বা গৃহকে বাহ্যিক অপবিত্রতা ও আবর্জনা এবং আত্মিক অপবিত্রতা থেকে মুক্ত রাখতে বলা হয়েছে। যেমন, দেহ ও পোশাক-পরিচ্ছদকে যাবতীয় অপবিত্রতা ও দুর্গন্ধযুক্ত বস্তু থেকে পাক-সাফ করে এবং অন্তরকে কুফর, শিরক, দুশ্চরিত্রতা, অহংকার, হিংসা, লোভ-লালসা ইত্যাদির কলুষ থেকেও কা'বা গৃহকে পবিত্র রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
কা'বা গৃহের অভ্যন্তরে ফরয হোক অথবা নফল যে কোন নামায পড়া বৈধ। কা'বা গৃহ নির্মাণের উদ্দেশ্য তওয়াফ, এ'তেকাফ ও নামায। বিশ্বের বিভিন্ন কোণ থেকে আগমনকারী হাজীদের পক্ষে নফল নামাযের চাইতে তওয়াফ উত্তম।
কা'বা গৃহের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো তা পৃথিবীর সর্বপ্রথম ও সুপ্রাচীন ঘর। কা'বা গৃহ গোটা বিশ্বের স্তম্ভস্বরূপ, বিশ্বের ব্যবস্হ্যাপনা ও কা'বা গৃহের মধ্যে একটি নিবিড় যোগসূত্র রয়েছে। ইসলামের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতের বিধান দেওয়া হয়েছে কা'বা গৃহকে কেন্দ্র করে।
নামায, হজ্জ, কুরবানী, পশুজবাই ও মৃতের দাফনসহ অনেক ইবাদত আদায় করতে হয় কা'বার দিকে ফিরে। হাদীসের ভাষ্যমতে কা'বা গৃহে এক রাকআত নামায আদায় করলে এক লক্ষ রাকআত নামায আদায়ের সওয়াব পাওয়া যায়।
লেখকঃ খতীব আব্দুচ্ছালাম বাগেরহাটী, পিলখানা, ঢাকা।
Naice
উত্তরমুছুনএকটি মন্তব্য পোস্ট করুন