ইসলামের শিক্ষাসমূহের মধ্যে অন্যতম বুনিয়াদি শিক্ষা হলো মানুষের নৈতিক চরিত্র সংশোধন ও শিক্ষাদান। নৈতিক চরিত্র হলো মানুষের সবচেয়ে উন্নত গুণ ও বৈশিষ্ট্য। এটি একটি উন্নত জাতির জীবনীশক্তি। মানুষের বা কোন জাতির নৈতিক চরিত্র যতদিন অক্ষুন্ন থাকে, সে মানুষ বা জাতিও ততদিন অক্ষয় হয়ে থাকে। যে জাতির চরিত্র নেই, সে জাতি এ দুনিয়ায় বেশীদিন টিকে থাকতে পারে না।
নৈতিকতার মূল চাবিকাঠি হলো তাকওয়া। আল্লাহ তা'আলা পবিত্র কালামে ইরশাদ করেনঃ "তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তিই আল্লাহ তা'আলার নিকট সবচেয়ে বেশী সম্মানিত, যে ব্যক্তি আল্লাহ তা'আলাকে সবচেয়ে বেশী ভয় করে " - (সূরা আল হুজরাত- ৪৯ঃ১৩)। ইসলামের দৃষ্টিতে নৈতিক চরিত্রের গুরুত্ব সর্বাধিক। মহানবী (সাঃ) বলেন, "নৈতিক বিচারে যে লোক উত্তম, মু'মিনদের মধ্যে সেই পূর্ণতম ঈমানের অধিকারী" (তিরমিযী, আবু দাউদ, মুসনাদে আহমদ)।
মূল্যবোধ মানুষের মনোজগতের ভালো বা কল্যাণকর দিকের পথপ্রদর্শক হিসেবে বিবেচিত। মূল্যবোধ পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে সুশৃঙ্খল, সুসংহত ও ঐক্যবদ্ধ করে স্থিতিশীল করতে সহায়তা করে। ইসলামী মূল্যবোধ বলতে ইসলাম প্রবর্তিত ধর্মপ্রসূত মূল্যবোধকেই বুঝায়। এ দুনিয়ায় মানুষ বা বিশ্ব-সভ্যতা আল কুরআন বা হাদীস থেকে মূল্যবোধের অধিকারী হয়েছে।
বর্তমান যুগের নৈতিক সমস্যা অনেক। হিংসাত্মক কার্যকলাপ, নৃশংসতা, প্রতারণা, কুটিলতা, অসতর্কতা, নিরাপত্তাহীনতা, পরাশক্তির আধিক্য, ফটকাবাজী, জালিয়াতি, অব্যবস্হা, অপচয়, ধর্ষণ, নারী নির্যাতন, অপহরণ, অসদাচরণ, পাচার, চোরাচালান, অবিচার, জাতীয় সম্পদ আত্মসাৎ, চুরি, ছিনতাই, উৎকোচ, এসিড নিক্ষেপ, বোমাবাজী, মিথ্যা বলা, লোভ, কপটতা, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, অনিয়ম, পরিণাম চিন্তাহীনতা, ক্ষুদ্র স্বার্থচিন্তা, বিবেক ও মানবতার অপমৃত্যু, অশ্লীলতা, বেহায়াপনা, অরাজকতা, দলাদলি, সংকীর্ণতা, অসাম্য, বৈষম্য ইত্যাদি বেড়েই চলেছে।
প্রায় দেড় হাজার বছর পূর্বে আরব বিশ্ব যখন অরাজকতা ও সন্ত্রাসের আখড়ায় পরিণত হয়েছিল, নীতি -নৈতিকতার মান যখন শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছিল, মানব সমাজ যখন পশুর সমাজে রূপান্তরিত হয়েছিল, তখনই শুরু হয়েছিল শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) -এর নবুওয়াতি জীবন। তিনি আল্লাহ প্রদত্ত ওহীর আলোকে শিক্ষা দিতে শুরু করলেন অজ্ঞতার আঁধারে নিমজ্জিত মানব সমাজকে। ক্রমান্বয়ে তারা স্রষ্টা ও পরকাল সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পেতে থাকল। অল্প কিছু দিনের মধ্যে ফিরে এল তাদের মধ্যে নীতি-নৈতিকতা। আজও যদি আমরা সন্ত্রাসমুক্ত সমাজ ও রাষ্ট্র গঠন করতে চাই ইসলামের আদর্শের মধ্যমেই কেবল তা সম্ভব হবে।
সমাজে অনেক সময় তুচ্ছ বিষয় নিয়ে বিরাট দাঙ্গা -হাঙ্গামা ও ত্রাসের রাজত্ব কায়েম হয়। প্রতিটি নাগরিক যদি একটু উদার হয়, আর নিজেদের ছোটখাটো ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখে, তবে অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত দাঙ্গা -হাঙ্গামা ও সন্ত্রাস থেকে মুক্ত থাকা যায়। পবিত্র কুরআনে আছে, "মু'মিনেরা পরসর ভ্রাতৃসংঘ, সুতরাং দ্বন্দ্ব-বিবেদের সময় তোমরা সংশোধন ও মীমাংসার পথ অবলম্বন করবে " (সূরা হুজুরাত-৪৯ঃ১০)।
অপরাধমুক্ত সমাজ গঠনে মহানবী (সাঃ) -এর গৃহীত কর্মসূচিসমূহঃ- আল্লাহর প্রতি ঈমান, তাওহীদ, রিসালাত, আখিরাতের জবাবদিহিতার প্রতি দৃঢ় প্রত্যয় সৃষ্টি ; মৌলিক অধিকার পূরণ ; সন্ত্রাস ও হত্যার অপরাধে আল্লাহর কঠোর শাস্তির আইন প্রতিষ্ঠা ; নারীর অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠা; আর্থ-সামাজিক অপরাধ দমন ; ব্যবসা-বাণিজ্য ও লেনদেনের ক্ষেত্রে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করা ; আইন ও বিচার ব্যবস্হার সকল বৈষম্য অপসারিত করা; মাদকাসক্তি, সন্ত্রাস, হত্যা ও অপরাধমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা করা ; ধর্মীয় স্বাধীনতা, পরধর্ম সহিষ্ণুতা, পরমত্ব সহিষ্ণুতা প্রতিষ্ঠা করা ; পরনিন্দা, পরচর্চা, হিংসা -বিদ্বেষ, পরশ্রীকাতরতা, স্বজনপ্রীতি, স্বার্থপরতা, ক্রোধ, মিথ্যা, ভন্ডামী, সকল অমানবিক আচরণ হতে চরিত্রকে মুক্ত ও পবিত্র করা।
আল্লাহ তা'আলা মুসলিম উম্মাহকে আজকের বিশ্বব্যবস্হায় সকল অন্যায়, অসততা, বিপর্যয়, অবক্ষয় ও অপরাধ থেকে মুক্ত করে ঐক্যবদ্ধ হয়ে নবী করীম (সাঃ) -এর গৃহীত কর্মসূচি ও কর্মপন্থার আলোকে অপরাধমুক্ত সমাজ গঠনের তাওফীক দান করুন। আমীন!
লেখকঃ খতীব আব্দুচ্ছালাম বাগেরহাটী, পিলখানা, ঢাকা।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন